শিরোনাম
Home / সারাদেশ / হরতাল-অবরোধে ৩৫ দিনে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় ক্ষতি প্রায় ৫০০ কোটি

হরতাল-অবরোধে ৩৫ দিনে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় ক্ষতি প্রায় ৫০০ কোটি

ঘোষণা ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পূঁজি করে গত ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে চলছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। সেই সূত্র ধরে হরতাল-অবরোধে চরম বাজে অবস্থা পার করেছেন কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এতে গত ৩৫ দিনে পর্যটন শিল্পে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনের দিন থেকে কক্সবাজারে শুরু হয় লক্ষ্যণীয় পর্যটক আগমন। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে হরতাল-অবরোধে সে যাত্রায় ভাটা পড়েছে। গত একটি মাস ধরে কঠিন গ্লানি টানছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। গত ৩৫ দিনে কক্সবাজারের পর্যটন খাতের সকল অনুষজ্ঞে প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে দাবি কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকার।

সূত্র মতে, বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর শুক্র-শনিবার বাদে ডাকা অবরোধ-হরতাল ভরা মৌসুমেও পর্যটন স্পটগুলোকে জনমানব শূন্য করে দিয়েছে। এতে সেই করোনাকাল ও ২০১৪ সালের মতো আবারো দেখা দিয়েছে পর্যটন শিল্পে অশনি সংকেত। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে অনেক হোটেল- মোটেল-রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। যার ফলে জেলার পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় অর্ধলাখাধিক কর্মজীবীর মাঝে বিরাজ করছে ছাঁটাই আতংক। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হলে এ শিল্পে হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতা ও তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস’র পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন দেশের অপার সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। বিশ্বের দীর্ঘতম অখণ্ড বালিয়াড়িকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারেই এ শিল্প বিকাশের সুযোগ রয়েছে। এখানে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা সমুদ্রপাড়ে হাজার কোটি টাকা গেড়ে ফেলেছি। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে থেমে থেমে যে অশুভ কাণ্ড দেশে ঘটছে তাতে এখানে বিনিয়োগকারীরা চোখে সরষের ফুল দেখছেন। ২০১৪ সালের জ্বালাও-পোড়াও, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাকাণ্ড, ২০১৯ সালের শেষের দিকে করোনাকাণ্ড আর এখন পর্যটনের ভরা মৌসুমে এসে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এ সময় পর্যটকে টইটম্বুর থাকার কথা পুরো সৈকত এলাকা। স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যটক আসতে পারলে দু’পয়সা আয় করা যেত। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও সময়মতো বেতন ভাতা প্রদানের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের কিছুটা হলেও শোধ করা সম্ভব। কিন্তু এখন পুরো পর্যটন এলাকায় স্থানীয় কিছু দর্শনার্থী এলেও পর্যটক নেই। ব্যাংক ঋণ দূরে থাক হোটেলে কর্মরতদের বেতন ভাতা পরিশোধ, তিন বেলা খাবার এবং আনুসাঙ্গিক খরচ মেটানোও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাধ্য হয়ে হোটেল বন্ধ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে হবে।

ট্যুরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০০ হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট। কিন্তু দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কক্সবাজার এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক রেস্টুরেন্ট। এছাড়া খরচ পোষাতে না পেরে কর্মচারী ছাঁটাই ও হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউজগুলো বন্ধ হতে বসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায় লোকসানের মাত্রা বেড়ে দেনার পরিধি বহুগুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতা রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, হরতাল-অবরোধের প্রভাবে পর্যটক নেই, নেই বেচাকেনাও। ফলে কর্মচারীদের বেতনও যোগাড় হয়নি। বর্ষা ও গ্রীষ্মে কোনোমতে ব্যবসা চালিয়ে শীত মৌসুমে পর্যটক সমাগম বাড়লে জমিয়ে ব্যবসা করা যায়। কিন্তু এবার ঋণের বোঝা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এমনটি চলতে থাকলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টানা হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটন জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ প্রায় ফাঁকাই যাচ্ছে। বিগত ২০১৩ সাল ও ১৪ সালেও একইভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা প্রায় হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিশীলতা, হরতাল ও অবরোধের কারণে এবারও ‘আশায় গুঁড়ে বালি’। ফলে পরোনো লোকসানে পড়বো এতে কোনো সন্দেহ নেই।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউজ শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, পর্যটক শূন্যতায় মালিক পক্ষ অনেককে বাধ্যতামূক ছুটি দিয়েছেন। খরচ পোষাতে না পেরে কর্মচারী ছাঁটাই হচ্ছে। ফলে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউজের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী অসহায় দিন যাপন করছেন।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কক্সবাজার এখন পর্যটকশূন্য। আবাসিক ও রেস্তোরাঁ খাতে প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। পর্যটনের অন্যান্য অনুষঙ্গে আরও ৫ কোটি টাকার ক্ষতি মিলিয়ে দৈনিক ১৫ কোটি টাকায় গত ৩৫ দিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এসময় পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হতো। এখন ফাঁকা সৈকতে পুলিশ সদস্যরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন

Check Also

অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৫৭৯ কর্মকর্তা

ঘোষণা ডেস্ক :মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মাঠ পর্যায়ের উপ-পরিচালক থেকে উপ-পরিদর্শক পর্যায়ের ৫৭৯ জন কর্মকর্তা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *