ঘোষণা ডেস্ক : দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষকে সরকার কথা বলতেও বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গুম-খুন- ক্রসফায়ারের শিকার হওয়া স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের উদ্যোগে শনিবার জাতীয় যাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা তাদের আকুতি ও মর্মন্ত পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী গুমপন্থি পুলিশ সেখানে তাদেরকে দাঁড়াতে দেয়নি, টেনে-হিচড়ে বের করে দিয়েছে, তাদেরকে কথা বলতে দিতেও ভয় পাচ্ছে। আজকে গুম-খুন-মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না। এক ভয়ংকর গুমের সরকার, ক্রসফায়ারের সরকার, মানবাধিকার লঙ্ঘেনের সরকার, রাষ্ট্রশক্তি নিয়ে এমনভাবে টিকিয়ে রাখতে চায় যাতে সরকারের অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ যেন টু-শব্দও না করতে পারে। এজন্য তারা বিস্তার করেছেন এক ব্যাপক নেটওয়ার্ক।
শনিবার(৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আসুন সাহস-আশা ও দৃঢ় সংকল্পের মনোভাব নিয়ে আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজয়ের পথে ধাবিত করি। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী নাৎসীদের অন্তঃসার শূণ্য অপপ্রচারের মায়াজ্বাল ভেদ করে স্বাধীনতা ও উদার মনোভাবের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অকান্ত উদ্যোম অব্যাহত থাকবে। এই জাতি কোনোদিনই স্বেচ্ছাতন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পন করেনি। গণতান্ত্রিক শক্তির কল্পনা ও আশা সর্বদা সজীব, সক্রিয় ও বিকাশীল। তাই বর্তমান আদর্শের সংগ্রামে আমরা বিজয়ী হবোই।
গত ৪ ডিসেম্বর রাতে তেজগাঁও কলেজ ছাত্র দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসনকে সাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য তুলে নেয়ার ঘটনা উল্লেখে অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান তিনি।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, কারাগারে বর্তমানে যে আইজি প্রিজন আছেন, তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সকল বন্দীদের সাধারণত সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখতে মৌখিকভাবে সব কারাগারে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি এর আগে কয়েকবার বলেছি, আইজি প্রিজন এমন ধরনের মানুষ যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিজের অবস্থান আরো দৃঢ় করার জন্য তিনি শপথ নিয়েছেন যে, কারাগারের ভেতরেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের তিনি জুলুম করবেন, নির্যাতন করবেন এবং বন্দিদের যে সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের যে মানবাধিকার সেটিকে চরমভাবে লঙ্ঘন করবেন। আজকে তিনি সারাদেশের কারাগারগুলোতে আরেকটি হিটলারের গ্যাস চেম্বার বানিয়েছেন, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প করেছেন, আজকে কারাগারগুলোতে নাৎসীদের মতোই সেই অবস্থা রয়েছে। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিপীড়ন-নির্যাতনে আজকে বিপর্যস্ত অবস্থা। এমনকি কারাগারের ভেতরের সেলগুলোর বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ ও কাপড়-চোপড় দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এমনকি মোবাইলে কথা বলা একেবারে সীমিত করা হয়েছে, মানে দিতেই চায় না। নিয়ম হয়েছে যে, সাপ্তাহে একদিন মোবাইলে আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা বলতে পারবে আর ১৫ দিন দেখা-সাক্ষাৎ আগে যা ছিলো প্রতি সাপ্তাহে।
তিনি বলেন, কারাগারগুলোতে এখন আর সত্যিকার সামাজিক অপরাধীরা থাকবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছে এই কারাগারগুলো পরিপূর্ণ করবেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের দিয়ে। তাই নিপীড়নের সকল পদ্ধতি তিনি আশ্বস্ত করেছেন ফ্যাসিবাদ ও নাৎসীদের কাছ থেকে। কারাগারগুলোতে তিনি (শেখ হাসিনা) বেঁছে বেঁছে সেই ধরনের অফিসারদের নিয়োগ দিয়েছেন যারা শেখ হাসিনার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। শেখ হাসিনা যা চান অর্থাৎ বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপীড়িত হোক, নির্যাতিত হোক, অত্যাচারিত হোক, ওরা বাইরে যেমন নির্যাতত হয়, ওরা ধরা পড়ার পরে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে মর্মান্তিক ও ভয়ংকরভাবে নিপীড়ন করা হয়। এখন কারাগারের ভেতরেও ভয়ংকরভাবে নিপীড়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকছে। এই নিপীড়ন নজিরবিহীন। এই নিপীড়ন ভাষায় বলা যাবে না। অতি উৎসাহী অফিসারেরা একপ্রকার দলীয় বন্দীদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমি বন্দীদের উপর এই ধরণের নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং পাশাপাশি বন্দীদের ন্যায্য অধিকার দেয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারি তিতুমীর কলেজ হল শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ হোসেন ডিবি পুলিশের নির্যাতনে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারের ভেতরে হাটাচলা ও খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেনা। ডিবি পুলিশের নির্যাতনে কারণে পায়ের হাটুতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছেনা, মাথায় আঘাত করার কারণে মাথায় প্রচন্ডরকম ব্যাথা অনুভব করছে এবং নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এমতাবস্থায় কারাকর্তৃপক্ষ কোন ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। আমি এই ধরণের অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং যতদ্রুত সম্ভব অসুস্থ ছাত্রদল নেতা নিয়াজ হোসেনের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জোর আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় নিয়াজ হোসেনের কিছু হলে সরকারকেই এর দায় বহন করতে হবে। রিজভী আরও জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৭৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং ৫টি মামলায় আরো ৫ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।