
ঘোষণা ডেস্ক : দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ ৩৬৪.৮৫ মার্কিন ডলার (৪০ হাজার ২১৬ টাকা, এক ডলার ১১০.২৩ টাকা ধরে) বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৬২ হাজার ৩১২.৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সাময়িক)। যার মধ্যে বহুপাক্ষিক ৩৬ হাজার ৭৮১.০৩ মিলিয়ন ডলার এবং দ্বিপাক্ষিক ২৫ হাজার ৫৩১.৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৭০.৭৯ মিলিয়নের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৩৬৪.৮৫ মার্কিন ডলার।
মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে বিশ্বব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৫৩৬.৮২ মিলিয়ন ডলার, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৪ হাজার ১১৪. ৮৯ মিলিয়ন ডলার, তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯৯৯.৯৮ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া থেকে ৫ হাজার ৮৯৯.৯৮ মিলিয়ন ডলার, চীন থেকে ৫ হাজার ৩৭৪. ১৫ মিলিয়ন ডলার, এআইআইবি ১ হাজার ৫০৪.১২ মিলিয়ন ডলার, ভারত থেকে ১ হাজার ২৯৯.৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নেয় বাংলাদেশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ বাবদ ৯৩৫.৬৬ মিলিয়ন ডলার এবং আসল বাবদ এক হাজার ৭৩৪.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সুদ বাবদ এক হাজার ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আসল বাবদ ২ হাজার ৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধে বাজেট আছে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ৫ বছরে (২০১৯-২৩) বিমানবন্দরের কাস্টমস এক হাজার ৪০৮ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। যার আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত সোনার মধ্যে ১ হাজার ২৭২.১০ কেজি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে স্থায়ীখাতে (দাবিদার নেই) ১০৯. ৭৬ কেজি এবং অস্থায়ীখাতে (দাবিদার আছে) ১ হাজার ১৬১.৩৪ কেজি।
মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। একই সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৪টি প্রকল্পের জন্য ৯১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নামে কোনো কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় চলমান নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা কৃষি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ নামে ঋণ বিতরণের একটি খাত রয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯। আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী স্পট ট্যাক্স নির্ধারণ বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে কর দাতার সংখ্যা ৮৯ লাখ ৫৩ হাজার ২০৬ জন। করদাতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে ৪৩টি সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে রিটার্ন দাখিলে প্রমাণ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন করদাতা বৃদ্ধি হচ্ছে।
ময়মনসিংহ ১১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মানদণ্ড অনুযায়ী চলতি মাসের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২১ হাজার ১১৬ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে, আমদানি ব্যয় বাড়াসহ রেমিট্যান্সের পরিমাণ কম, ইত্যাদি কারণে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগের তুলনায় কমে এলেও কোনো ঘাটতির সৃষ্টি হয়নি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞার ফলশ্রুতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে এবং মুদ্রা বিনিময় হারে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেনজির আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে (সাময়িক হিসাব)। ২০০৫–৬ ও ২০০৭–৮ অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল যথাক্রমে ৫৪৩ ও ৮৬৮ মার্কিন ডলার। এরমধ্যে ২০০৫–৬ অর্থবছরের তুলনায় মাথাপিছু জাতীয় আয় পাঁচগুণের বেশি বেড়েছে।