
চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ এলাকার বেলতলী ঘোনায় পাহাড় ধসে শ্রমিক মজিবুর রহমান খোকনের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার(৮ এপ্রিল) দুপুরে খোকনের স্ত্রী হাসিনা বেগম বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। তবে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা হিসেবেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, পাহাড় ধসের পর লাল ফিতা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে বেলতলী ঘোনার দুর্ঘটনা এলাকাটি। যেখানে লোকজনের যাতায়াতও সীমিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, ‘দুপুরে নিহত মজিবুর রহমানের স্ত্রী হাসিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজিবুর রহমানের মরদেহটিও তার স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অতি শীঘ্রই অবৈধভাবে পাহাড় কাটা রোধসহ এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনায়ও বসবে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলতলী ঘোনার গার্ডেন ভ্যালী থেকে বায়তুল আমান জামে মসজিদ পর্যন্ত সড়কটি নির্মিত হচ্ছে। এজন্য খাঁড়াভাবে পাহাড় কাটার কারণে অগ্রণী হাউজিং সংলগ্ন পাহাড়টি ওপর থেকে নির্মীয়মাণ সড়কের ওপর ধসে পড়ে।
জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার ভূমি ওমর ফারুক অভিযান চালিয়ে ১জনকে সাতদিনের কারাদন্ড দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর কাজ পুনরায় শুরু হয়।
সহকারী কমিশনার ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর পর কীভাবে কাজ শুরু হলো তা জানা নেই। পাহাড় কেটে এই সড়ক হচ্ছিল। আগামীকাল থেকে আমরা তদন্তকাজ শুরু করব।’
অভিযোগ ওঠেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ এবং খাস পাহাড় দখলের। দুর্ঘটনাস্থলের যে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছিল, সেটি স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজনই তদারকি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ‘স্থানীয় কাউন্সিলরের নির্দেশে পাহাড় কাটা হচ্ছে’ উল্লেখ করে পার্শ^বর্তী অগ্রণী ব্যাংক হাউজিং কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরেও চিঠি দেয়। চিঠিতে সড়কটি নির্মাণের কারণে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগই গ্রহণ করেনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মুহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড় কাটার অভিযোগের ভিত্তিতে গেল ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালান। একজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি, তবে তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে যদিও ইতোপূর্বে এলাকাটি পরিদর্শনের পর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল, তবুও অবৈধভাবে বসবাসসহ সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে পাহাড়কাটা রোধসহ সকল বিষয়ে করণীয় নির্ধারণসহ অতি শীঘ্রই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’