
নিজস্ব প্রতিবেদক :চট্টগ্রাম নগরে সরকারি জমির কাগজপত্র জালিয়াতি করে ব্যক্তির নামে খতিয়ান তৈরির অভিযোগ উঠেছে। আর এই অনৈতিক কাজে জড়িত খোদ ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। নগরের হালিশহর থানার রামপুর মৌজায় এই জমির অবস্থান। শূন্য দশমিক ৩৮ একর জমিটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি (এপি) হিসেবে সরকারি নথিতে রয়েছে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা বা মালিকানা নেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে সরকারি নিবন্ধন খাতায় (বালাম বই) ঘষামাজা করে পরিত্যক্ত সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভূমি অফিসের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবৈধভাবে সরকারি এই সম্পত্তি এ পর্যন্ত ৩বার বিক্রিও হয়েছে। ইতিমধ্যে জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের আগ্রাবাদ সার্কেল ভূমি অফিসে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের শুরুতে ওই জমির খাজনা দিতে আবেদন করেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন নামের একজন। এরপরই জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই জমিটি ভোগদখল করছেন। কাগজপত্র যাচাই করে কর্মকর্তারা কামাল উদ্দিনের নামে যে খতিয়ান পান, তাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সই নেই।
ভূমি অফিস জানায়, যে দাগ ও খতিয়ান ধরে আবেদন করা হয়েছে, সেটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। নিবন্ধন খাতায় সেটিকে ঘষামাজা করে অর্পিত সম্পত্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সর্বশেষ গত ১২ মে আগ্রাবাদ সার্কেল ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কানুনগো তনক চাকমাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এর আগেও তদন্ত হয়েছে কয়েক দফা।
জানতে চাইলে আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান বলেন, ‘আমাদের যখন মনে হয় কোনো ঘটনায় যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন, আমরা তখনই অভ্যন্তরীণ কমিটি করি। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কমিটিও জানে। আমরা তদন্ত করে কিছু অসংগতি পেয়েছিলাম। যেহেতু এখানে সরকারি স্বার্থ আছে, তাই সরকার এখানে সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জমিটি নিয়ে এর আগেও কয়েক দফা প্রতিবেদন দিয়েছে সার্কেল ভূমি অফিস। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রামপুরা মৌজায় পিএস (পাকিস্তান সার্ভে) ১৫৩ ও ৭১০ নম্বর খতিয়ানে থাকা প্রায় শূন্য দশমিক ৪১ একর জমিটি ১৯৬৪ সালে কেনে মেসার্স আশরাফ অ্যান্ড ব্রাদার্স। পরে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পাকিস্তান চলে গেলে জমিটি নন–গেজেটেড পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
ভূমি অফিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কামাল উদ্দিনের নামে নামজারি খতিয়ান হয়েছে ২০১২ সালে। তবে ঘষামাজা কবে হয়েছে, সেটি সঠিক জানেন না কেউ। জমির জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক তনক চাকমা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। আপনি চাইলে সহকারী কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’ বাকি দুই সদস্যও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।
জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিবন্ধন খাতায় কোনো রকম ঘষামাজার নিয়ম নেই। যদি তেমন কোনো সংশোধন করতে হয়, তবে সেখানে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এবং ক্ষেত্র বিশেষে জেলা প্রশাসকের সই লাগে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত অনেকগুলো কমিটি হচ্ছে। অসংগতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড, চট্টগ্রামের (এপিএমবি) চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে এটি অবশ্যই অপরাধ। পরিত্যক্ত ও অর্পিত—দুই ধরনের সম্পত্তির বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হয়।’
এদিকে আগ্রাবাদ ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে জমির শ্রেণি পরিবর্তন, জাল খতিয়ান ও ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরি ও সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠে নেমেছে দুদক। জালিয়াতি তদন্তে রোববার(২০ জুলাই) সেখানে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল।
দুদক চট্টগ্রামের উপ পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দল আগ্রাবাদ ভূমি অফিসে গিয়েছে। সেখান থেকে তদন্তসংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করেছে।’