শিরোনাম
Home / জাতীয় / পুলিশের হাতে থাকবে না কোনো মারণাস্ত্র, গরুর হাটে ১০০ জন করে আনসার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পুলিশের হাতে থাকবে না কোনো মারণাস্ত্র, গরুর হাটে ১০০ জন করে আনসার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঘোষণা ডেস্ক : গেল বছর জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন দমনে নির্বিচার অস্ত্র ব্যবহার করে ভাবমূর্তির সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নবম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে তিনি বলেন, “পুলিশের হাতে যেন আর কোনো মারণাস্ত্র না থাকে, এগুলো তাদের জমা দিয়ে দিতে হবে।

“কোনো মারণাস্ত্র আর অস্ত্র পুলিশের হাতে থাকবে না। কিন্তু আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে থাকবে।”

তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন বলে জানান তিনি। এপিবিএনকে মারণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “এপিবিএনের কাজ কিন্তু অন্য পুলিশের থেকে একটু ডিফরেন্ট।”

পুলিশকে মরণাস্ত্র দেওয়া যাবে না কিন্তু যখন কোনো অভিযানে যাবে তখন পুলিশ কী করবে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি একটা কথা বলেছি এপিবিএনের কাছে মারণাস্ত্র থাকবে। সাধারণ অপারেশনের ক্ষেত্রে মারণাস্ত্র দরকার নেই। রাইফেল থাকবে না তা নয়, রাইফেল তো থাকবেই “

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আজকে মিটিংয়ে একটা ডিসিশন হয়েছে। সিদ্ধান্ত বলার সাথে সাথে তা হয়ে যায় না। একটু সময় লাগবে।”

এছাড়া সভায় র‍্যাব পুনর্গঠনের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “র‌্যাব পুনর্গঠন কীভাবে হবে, এই নাম থাকবে কি না, এই ড্রেস থাকবে কি না, এই ফোর্স থাকবে কি না, কীভাবে অর্গানাইজ হবে- এজন্য আমরা ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছি।”

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আবদুল হাফিজকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিতে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা থাকছেন।

“পাঁচজনের এই কমিটি প্রয়োজন মনে করলে কো-অপ্ট করতে পারবে,” বলেন উপদেষ্টা।

ভারত থেকে লোকজনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার বিষয়ে নিয়ে বৈঠকে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে সেটা হচ্ছে ইন্ডিয়া বেশকিছু পুশইন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক বেশি।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “গত ৭ এবং ৮ মে দুইদিনে ২০২ জনকে আমরা পেয়েছি যাদেরকে বিএসএফ বিভিন্ন কর্নারে পুশইন করেছে। এমন জায়গায় যেখানে জনগণ নেই, জনবসতি নেই সে রকম জায়গায়।

“এই ২০২ জনের অনেকেই গত দুই তিন বছর থেকে শুরু করে ২০-২৫ বছর আগে নানা কাজে ভারতে গিয়েছিল। এদের মধ্যে অনেকের সন্তানাদি আছে যারা ভারতে জন্ম নিয়েছিল এবং তাদের আধার কার্ড, অন্যান্য ডকুমেন্টস ছিল। সেখানকার পুলিশ বা বিএসএফ এসব রেখে দিয়ে পুশইন করেছে।”

এসব লোকজনকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় এবং কুড়িগ্রামের রৌমারি চর অঞ্চল দিয়ে পাঠানো হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভেরিফিকেশন করে যাদের বাংলাদেশি পাওয়া গেছে তাদেরকে প্রশাসনের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াধীন আছে।”

২০২ জনের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা রয়েছে বলেও তথ্য দেন মহাপরিচালক।

“এদের মধ্যে যারা আমাদের এখানে ক্যাম্পে তালিকাভুক্ত ছিল তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আবার ৫ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে যারা ভারতের ইউএন রিফিউজি এবং সেখানকার রেজিস্ট্রেশনভুক্ত। তাদেরকে পুশইন করার বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”

এ বিষয়গুলো জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “ভারতে রিফিউজি হিসেবে তালিকাভুক্ত যাদেরকে পুশইন করা হয়েছে তারা যদি বাংলাদেশি হয় তাহলে নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করা হবে, লুকোচুরি করে নয়।”

২০২ জনের বাইরে খাগড়াছড়ি এলাকায় দুই থেকে ৩০০ জন শরণার্থীকে বিএসএফ বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ মহাপরিচালকের।

“আমাদের পেট্রোলিংয়ে কারণে তারা পারছে না। এখনো সেসব শরণার্থী সেখানে আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”

এরইমধ্যে আবার সুন্দরবনের চর বান্দারবাড়িয়া চরে ‘কোন এক ভারতীয় জাহাজ’ ৭৮ জনকে ফেলে গেছে, যাদেরকে উদ্ধার করে নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, “গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ঈদের আগে পরিশোধ করে দিতে হবে। যারা বেতন পাওয়ার যোগ্য তাদের দিতে হবে, কিন্তু যে সকল শ্রমিক অবৈধ দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে, তাদের বরদাস্ত করা হবে না।”

এবার গরুর হাটে আনসার সদস্যদের রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতি হাটে একশ করে আনসার সদস্য তাদের (ইজারাদার) রাখতে হবে।

“ইজারদাররা ভলান্টিয়ার রাখে, হাসিল দিয়েছে কি না এটা দেখে। ভলান্টিয়ার ছাড়া প্রতি হাটে অঙ্গীভূত আনসার রাখতে হবে একশ জন করে, মানুষের নিরাপত্তার জন্য। যেন ছিনতাই বা মলম পার্টির খপ্পরে কেউ না পড়ে এটা দেখবে।”

ঈদে যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে যেতে পারে গরুর ট্রাক যেন নির্বিঘ্নে আসতে পারে, কোনো চাঁদাবাজি যেন না হয় সেজন্য হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Check Also

বেদখল জমি উদ্ধার এখন আরও সহজ, বদলে গেলো আইনি প্রক্রিয়া

ঘোষণা ডেস্ক: বেদখল বা জবরদখল জমি উদ্ধার করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। কারণ, …