শিরোনাম
Home / অপরাধ / নামের মিল থাকায় বৃদ্ধের পরিবর্তে যুবক গ্রেফতার : পরিচয় পত্র দেখিয়েও রেহাই  পায়নি

নামের মিল থাকায় বৃদ্ধের পরিবর্তে যুবক গ্রেফতার : পরিচয় পত্র দেখিয়েও রেহাই  পায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নামের মিল থাকায় বৃদ্ধের পরিবর্তে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ভুজপুর থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় ভুক্তভোগী যুবক বারবার নিজের পরিচয়পত্র দেখানোর চেষ্টা করলেও তা দেখতে রাজি হয়নি পুলিশ। এমনকি গ্রেপ্তারের পর স্বজনরা ভুক্তভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ থানায় গিয়ে ৬ ঘণ্টা পুলিশকে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

ভুক্তভোগী যুবকের নাম দেলোয়ার হোসেন। ২৭ বছর বয়সী দেলোয়ার ভুজপুর থানার দাঁতমারা ইউনিয়নের মুহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম বাচ্চু মিয়া ও মায়ের নাম আয়েশা খাতুন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের ২১১/২১ নম্বর মামলার আসামি পঞ্চাশোর্ধ দেলোয়ারের বাড়ি পার্শ্ববর্তী গ্রামপাড়া এলাকায়। মিল নেই বাবা-মায়ের নামেও। তার বাবার নাম বাচা মিয়া ও মায়ের নাম আমেনা খাতুন। ব্র্যাক ব্যাংকের হালিশহর শাখা থেকে তার বড় ছেলে শহিদুল ইসলামের নেয়া ৬ লাখ টাকা ঋণের জামিনদার তিনি। বছর ছয়েক আগে শহিদুলের মৃত্যু হওয়ায় সেই ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব পড়ে বাবা দেলোয়ারের ওপর। নির্দিষ্ট সময়ে ওই ঋণ পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে ঋণখেলাপির মামলা করে ব্যাংক। সম্প্রতি ওই মামলায় দেলোয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। সেই পরোয়ানায় মূল আসামি দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার না করে মুহাম্মদপুর এলাকার ২৭ বছরের যুবক দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী যুবকের ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, “গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে এসে তাকে নিয়ে যায় ভুজপুর থানার উপপরিদর্শক খাইরুল। এ সময় আমার ভাই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে চাইলেও পুলিশ ‘সময় নেই’ বলে দ্রুত তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।”

তিনি অভিযোগ করেন, পরদিন সকাল ৭টায় ভুক্তভোগী দেলোয়ারের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখান। এতে ওই পুলিশ কর্মকর্তা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তখন তিনি ভুজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সমাধান পাননি। ওই দিন বেলা ১টা পর্যন্ত থানায় দৌড়াদৌড়ি করলেও তার কথা আমলে নেয়নি পুলিশ। বরং ভুক্তভোগী নির্দোষ হলে আদালত থেকে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয় পুলিশ।

ভুক্তভোগীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমরান নাঈম বলেন, ‘কোনো আসামি গ্রেপ্তারের সময় তার নাম-পরিচয় নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা যাচাই করে নিতে হয়। কিন্তু পুলিশ তা না করেই নিরপরাধ দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠিয়েছে।’

এ বিষয়ে মূল আসামি দেলোয়ার ও মূল ঋণ গ্রহীতা শহিদুলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। পলাতক দেলোয়ার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে শহিদুলের স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী চট্টগ্রাম শহরের সবুজবাগ এলাকায় ব্যবসা করতেন। ২০১৭ সালের ১৯ মে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তিনি এখানে (গ্রামে) কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সেসব ঋণের মধ্যে আড়াই লাখ টাকার মতো জামিনদার আমার বাবা। এখন তিনি রিকশা চালিয়ে সেই ঋণ পরিশোধ করছেন। তবে আমার স্বামী কখনো শহরের কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে কি না, আমি জানি না।’

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার(২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘ওসি যখন বুঝতে পেরেছেন যে এটা সঠিক না, তখন সঙ্গে সঙ্গে কোর্টে ফোন করেছেন। কোর্ট থেকে তাকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। সে এখন মুক্ত।’

ভুক্তভোগীর ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমার ভাই এখনো কারাগারে। তবে নামের ভুলে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছেন আইনজীবী। তাই আদালত তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পেরিয়ে যাওয়ায় তার মুক্তি হয়নি। শুক্রবার তাকে মুক্তি দেয়ার কথা।’

তার নিরপরাধ ভাইকে গ্রেপ্তার ও পরিবারকে হয়রানির বিচার ও ক্ষতিপূরণ চান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘বারবার নামের ভুলে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তারের পরও দোষীদের বিচার না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। ভুজপুর থানায় এ রকম একটি ঘটনা ঘটার পর তো থানার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে ক্লোজড করা উচিত। তাদের তো চাকরি করার অধিকার নেই! পুলিশ জনগণের বন্ধু, তারা কেন নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করবে? পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য হলেও তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’

Check Also

কর্ণফুলীর তীরে মিললো স্কুলছাত্রের মরদেহ, ৪ সহপাঠী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও হামিদচর এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে রাহাত ইসলাম (১২) …