শিরোনাম
Home / জাতীয় / ভোটারদের কেন্দ্রে আসা বন্ধে ছড়ানো হতে পারে টাকা: ইসিকে মাঠ প্রশাসন-পুলিশ

ভোটারদের কেন্দ্রে আসা বন্ধে ছড়ানো হতে পারে টাকা: ইসিকে মাঠ প্রশাসন-পুলিশ

ঘোষণা ডেস্ক : ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশের কথা শুনেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ সভায় কমিশনের তরফে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলার পাশাপাশি ‘ঐতিহাসিক মডেল নির্বাচন’ করতে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দেন সিইসসহ নির্বাচন কমিশনাররা।

মঙ্গলবার(২৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে ৮জন বিভাগীয় কমিশনার, ৮ জন ডিআইজি, ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, ৬৪ জন এসপি, ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ২২৬ জনকে নিয়ে সভা করে ইসি।

এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন বাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধি, মহাপরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকের দুদিনের মাথায় মাঠ কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা নিয়ে নির্দেশনা দিল ইসি।

আলোচনায় উঠে এল যেসব বিষয়

>> আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে

>> রাজনৈতিক দলের অন্ত:কোন্দল, বৈধ অস্ত্র জমা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার

>> নতুন কর্মকর্তা হিসেবে চ্যালেঞ্জ

>> ভোটের আগে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে অবৈধ অর্থ লেনদেন

>> ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না আসেন সেই অপচেষ্টা

>> ভোট সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের জামিনের বিষয় বিবেচনা

>> সীমান্ত এলাকায় বিজিবি মোতায়েন, এআইয়ের অপব্যবহার রোধ

যেসব চ্যালেঞ্জ দেখছেন তারা

ভোটের পথে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার এ বৈঠকে মাঠ প্রশাসন, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সব ধরনের প্রচেষ্টার কথা শুনিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনও অভয় দিয়ে বলেছে, যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে এবং আইনানুগ কাজ করলে সব সময় পাশে থাকবে ইসি।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, “ঢাকা সিটির আইনশৃঙ্খলার ইস্যু বড় ইস্যু। অপরাধীদের জামিনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় প্রতিটি মিটিংয়ে এটা আলোচনা হয়। নির্বাচনের পূর্ব সময়ে জামিনের বিষয়টা অপরাধী যারা তাদের বিষয়ে একটু যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় আমাদের জন্য সহজ হয়। বিবেচনার যদি সুযোগ থাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।”

জামিন বন্ধ ও বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার ফারাহ শাম্মী ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন নবী। তারা অপরাধীদের আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মত সংঘাতপ্রবণ এলাকায় বিশেষ অভিযানের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বর্ডার এলাকায় বিজিবি মোতায়েন এবং সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসা বন্ধে কড়া নজরদারির তাগিদ দেন।

গুজব ও এআইকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এটি রোধে বিটিআরসির সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

নতুন কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ

চট্টগ্রামের বৈচিত্র্য তুলে ধরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, আগামী দিনের বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত হবে সেটা নির্ধারণের। মূলত উদ্বেগ নির্বাচনে একগুচ্ছ মেধাবী নতুন কর্মকর্তা মাঠে নেমেছে। তাদের আস্থা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছি।”

তিনি বলেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দুর্গমতা, বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এখনো মাঠে রয়েছে, সেগুলো দ্রুত উদ্ধার প্রয়োজন। এ বিষয়ে দ্রুত পদেক্ষপ নিতে হবে।”

ভোটের আগে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফারের বিষয়টি অন্তত সাত দিন আগে বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান এ জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, “একটা গ্রুপ থাকবে ভোটাররা কীভাবে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না থাকতে পারে সে ধরনের চেষ্টা থাকতে পারে। সাধারণত টাকা ব্যবহার করা হয় ভোট দেওয়ার জন্য। এবার ধারণা করছি একটা গ্রুপের কাছে অনেক টাকা আছে, এটা ব্যবহার হতে পারে ভোটাররা না আসার জন্য।“

‘আইনের বাইরে নির্বাচন করতে রাজি নই’

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, গণভোটের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা নেওয়া হয়েছে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে বিবেচনায় নিয়ে ২০% অতিরিক্ত লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এআই-এর অপব্যবহার রোধের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে ইসির পদক্ষেপ চান তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা অনেক কথা শুনতে রাজি, সমালোচনা শুনতে রাজি; সব কিছু শুনতে রাজি। কিন্তু আইনের বাইরে নির্বাচন করতে রাজি নই। কোনো পক্ষের কোনো প্রভাব আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।“

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “আইনের বাইরে অবশ্যই কিছু করার সুযোগ নেই। দল মত নিরপেক্ষভাবে কাউকে কোনো কিছু করার (অন্যায়) সুযোগ দেব না, ছাড় দেব না- আমরা বদ্ধপরিকর।“

কাজের সুবিধার্থে প্রতিটি বিভাগে যৌথ সভা হলে সবার মধ্যে সমন্বয়, মিথস্ক্রিয়া ভালো হবে বলে তুলে ধরেন তিনি।

নেতিবাচক প্রচারে উপস্থিতি কমার শঙ্কা

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিপর্যস্ত কথা আসে। মনে হয় সিরিয়া, লেবাননে বসবাস। এভাবে নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।

“এর প্রভাব নিয়ে আমরা ভাবছি না। সবাই মিলে আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরছি, তাতে ভোটার আসা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। এবং ভোটার কম আসুক এটা অনেকে চাচ্ছে। সুতরাং ভোটার টার্ন আউট কমানো যাবে না।”

প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে ‘বুকের জোর বেড়েছে‘ সিইসির

তিনি বলেন, “কোনো ঘটনা প্রকাশের আগে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে। জনগণ কী খেতে চায়, ভিউ বাড়বে-এভাবে ভাবলে হবে না।”

অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে এই ডিআইজি বলেন, “অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কে আমরা বিব্রত, বিচলিত, লজ্জিত সন্দেহ নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেউ সাহায্যও করছে না, তথ্য দিচ্ছে না। আমরা প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছতে পারছি না।“

তিনি ভোটের সময় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে কড়া নজরদারিতে রাখার তাগিদ দেন।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির কাজ চলছে।

‘আগের দুষ্টুরা’ অন্য দলের আড়ালে কাজের চেষ্টা করছে

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম ফরহাদ হোসেন বলেন, “কিছু কনফ্লিক্ট রয়ে গেছে। ইতোপূর্বে যারা বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমি কাজ করছে, তারা এখন বিভিন্ন দলের আন্ডারে/কভারে কাজ করার চেষ্টা করছে। এ একটা প্রতিকূলতা আমাদের সামনে রয়েছে, এটা আপনাদের নজরে রাখার অনুরোধ করছি।”

জেলায় ১৯০০ কেন্দ্রের জন্য পুলিশের জনবল সঙ্কটের কথা জানান তিনি।

দুটি ভোট শেষ করার পর গণণা করতে সময় বেশি লাগার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “এ ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সব ব্যারিয়ার ওভারকাম করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার চেষ্টা করছি। সবার সাথে সমন্বয় করছি। অতীতের ধারাকে ভেঙে দিয়ে নতুন একটা পরিবেশ উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। “

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, একই দিনে দুটো নির্বাচন হওয়ায় সচেনতাটা খুবই জরুরি।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অধস্তনদের বদলির বিষয়টা এসপির অধীনে দিলে পোস্টিং করে কমিশনকে অবগতি করার সুযোগ হলে আইনশৃঙ্খলার জন্য অনেক সহায়ক হবে।

ভোট চলাকালীন অনিয়ম হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বউদ্যোগে প্রতিরোধ করবে না কি প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করবেন-সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা চান এই পুলিশ সুপার।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার দুটি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনূচ আলী ভোট প্রস্তুতি, অবৈধ অর্থের লেনদেন বন্ধসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন।

খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সাল কাদের বলেন, কিছু ভোটকেন্দ্র এখনও সংস্কার বাকি রয়েছে, তা দ্রুত করা দরকার।

সভায় তাদের বাইরে সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব আখতার আহমেদ, জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হক, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।

Check Also

কাজী নজরুলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন শহীদ ওসমান হাদি

ঘোষণা ডেস্ক :জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত হবেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা, ইনকিলাব …