শিরোনাম
Home / অনুসন্ধান / চট্টগ্রামের হালিশহরে চোরাই স্বর্ণ উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের লঙ্কাকাণ্ড, ৩০ শতাংশ হিস্যা দাবী

চট্টগ্রামের হালিশহরে চোরাই স্বর্ণ উদ্ধারে গিয়ে পুলিশের লঙ্কাকাণ্ড, ৩০ শতাংশ হিস্যা দাবী

বিশেষ প্রতিনিধি :সিএমপি’র হালিশহর থানাধীন গোল্ডেন আবাসিক এলাকার একটি বাসার চোরাই স্বর্ণ, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধারের সময় পুলিশের সীমাহীন অনিয়ম- দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চোরের নিকট থেকে নগদ টাকা উদ্ধার করলেও সেটা জব্দ তালিকায় না দেখানো এবং চোরাই স্বর্ণ ক্রেতাদের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা ও স্বর্ণ হাতিয়ে নেওয়ার মত চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। এছাড়া ভুক্তভোগী বাদীর নিকট থেকে উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ৩০ শতাংশ হিস্যা নিয়ে দর কষাকষির ঘটনায় হতবাক হবেন অনেকে।

মামলাসূত্রে জানা যায়, গত ইং ৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩ টার সময় হালিশহর থানাধীন গোল্ডেন আবাসিক এলাকার কে-ব্লকের ১ নং রোডের ৫ নং বাড়ীর ৪র্থ তলার ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনান নামের এক ব্যবসায়ীর বাসার জানালার গ্রীল কেটে বাসার ভিতরে অজ্ঞাতনামা চোর/চোরেরা প্রবেশ করে আলমারীতে রক্ষিত আনুমানিক ১১ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ২ লক্ষ ১১ হাজার টাকা এবং একটি রিয়েলমি সি-১১ মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় ফয়সাল আবদুল্লাহ আদনান বাদী হয়ে পেনাল কোড ৪৫৭/৩৮০ ধারায় এজাহার দায়ের করেন। ১১ নভেম্বরের হালিশহর থানার এফআইআর নং-৬।

সিএমপির প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, মামলা রুজু হওয়ার পর হালিশহর থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ নুরুল আবছার ও পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আবু হানিফ এর নেতৃত্বে হালিশহর থানা পুলিশের এসআই মোঃ সামসুজ্জামান, এসআই মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, এসআই মোঃ ইমরান হোসেন, এসআই মোঃ এহছান মাহবুব ও সঙ্গীয় ফোর্স সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস অভিযানিক টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রাম মহানগরী এবং নোয়াখালী জেলা ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোর চক্রের মূল হোতা আব্দুল আলিম প্র: শাকিল(২৯) এবং ইয়াসিন আরাফাত শাকিল(২৫)সহ মোট ৫জন আসামীকে গ্রেফতার করে এবং আসামীদের স্বীকারোক্তি মতে ইং ০৩/১২/২৫ তারিখে বাদীর চোরাই যাওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে মোট ৭ ভরি ৭ আনা ৪ পয়েন্ট স্বর্ণালংকার ও চোরাই যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চোরাই স্বর্ণ উদ্ধারকারী কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অনিয়ম-দূর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযানে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সর্বপ্রথম চোর বহনকারী রিকশাচালক আবু বক্করকে ১৬ই নভেম্বর
গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে একজন চোর আব্দুল আলীম শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়। শাকিলের দেওয়া তথ্যমতে ২৩ নভেম্বর ডবলমুরিং এলাকা থেকে মো: মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। শাকিল জানায় তার নিকট জুয়া খেলার জন্য কিছু স্বর্ণ বন্ধক রেখেছে। এসময় মোঃ মিয়ার নিকট থেকে ১ভরি ৩ আনা ৩ পয়েন্ট ওজনের একজোড়া চূড়ি, ৩ আনা ৫ পয়েন্ট ওজনের একজোড়া কানের দুল, ৮ আনা ৫ পয়েন্ট ওজনের একটি হাতের ব্লেসলেট উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। একই দিনে আব্দুল আলীম শাকিলের নিকট থেকে চোরাইকৃত রিয়েলমি সি-১১ মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়।

শাকিল জানায় তার নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ীতে তার স্ত্রীর নিকট এবং হবিগঞ্জে তার সহযোগী আরেক চোর ইয়াছিন আরাফাত শাকিলের নিকট আরো স্বর্ণ রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ২৬ নভেম্বর এসআই মোঃ ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকা থেকে ইয়াছিন আরাফাত শাকিলকে গ্রেফতার করলে সে জানায় তার চাচী ববি আক্তারের মাধ্যমে একটি দোকানে প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ বন্ধক রেখে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। এসময় শাকিলের পিতা হারুন মিয়ার নিকট থেকে নগদ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এসআই ইমরান বুঝে নিলেও সেই টাকা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। শাকিলের তথ্যের ভিত্তিতে ঐদিন ডবলমুরিং এলাকা থেকে ববি আক্তারকে গ্রেফতার করলে ববি আক্তার জানায় স্বর্ণগুলো লাকী প্লাজার রিম জুয়েলার্সে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বন্ধক রেখেছেন। এসআই মোশাররফ হোসাইন টিম নিয়ে রিম জুয়েলার্স থেকে ১১ আনা ২ রত্তি ৯ পয়েন্ট ওজনের একটি গলার হার, ১১ আনা ২ পয়েন্ট ওজনের একটি গলার হার, ১ ভরি ৫ আনা ৫ পয়েন্ট ওজনের এক জোড়া কানের ঝুমকা উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এসময় এসআই মোশাররফ জুয়েলার্সের মালিককে মামলায় আসামি করার হুমকি দিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা নেন।

পরবর্তীতে আবদুল আলীম শাকিল এবং ইয়াছিন আরাফাত শাকিলকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ২ ডিসেম্বর ছোট পুল ব্রিকফিল্ড রোডের মিনতি জুয়েলার্স থেকে একটি আংটি এবং একজোড়া কানের দুল (মোট ওজন ৬ আনা ৪ রত্তি ৩ পয়েন্ট) উদ্ধার করে জব্দ করেন। এসময় জুয়েলার্সের মালিক প্রদীপের নিকট থেকে জোরপূর্বক আরো ৬ আনা ওজনের একজোড়া কানের দুল নিয়ে নেন এসআই মোশাররফ হোসাইন, যা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। একইদিন ডবলমুরিং থানাধীন হাড্ডি কোম্পানি রোডস্থ প্রীতম জুয়েলার্স থেকে ২ আনা ৩ রত্তি ৮ পয়েন্ট ওজনের একজোড়া কানের দুল এবং ৩ আনা রত্তি ৮ পয়েন্ট ওজনের একটি আংটি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে ৩ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সুধারাম থানাধীন আন্ডারচর এলাকায় আব্দুল আলীম শাকিলের স্ত্রীর নিকট থেকে ৩ আনা ১ পয়েন্ট ওজনের একটি আংটি, ৩ আনা ওজনের একটি চেইন, ১০ আনা রত্তি ৬ পয়েন্ট ওজনের একটি চেইন এবং ২ রত্তি ৪ পয়েন্ট ওজনের একটি নাকফুল এবং চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন দাসেরহাট অরূপ শিল্পালয় থেকে ১ আনা ৫ রত্তি ৫ পয়েন্ট ওজনের একজোড়া কানের দুল উদ্ধার করে জব্দ করেন।

উল্লেখ্য যে, স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় মোঃ মিয়া এবং ববি আক্তারকে গ্রেফতার করলেও ৪জন স্বর্ণকারকে গ্রেফতার না করার বিষয়টি সন্দেহজনক। কারণ কেউ এসব স্বর্ণ বিধিমোতাবেক ক্রয় করেননি কিংবা বন্ধক নেননি।রীম জুয়েলার্সের বালামে ববি আক্তারের নাম উল্লেখ করা হয় তানিয়া।

মামলার বাদী ফয়সাল আব্দুল্লাহ আদনানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিকে আমার বাবা অসুস্থ অন্যদিকে বাসায় চুরির ঘটনায় আমি মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত। হালিশহর থানার ওসি মহোদয়ের আন্তরিকতায় আমার চোরাই স্বর্ণ থেকে সাড়ে ৭ ভরি উদ্ধার হলেও তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মোশাররফ হোসাইন আমার উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ৩০ শতাংশ দাবী করায় হতবাক এবং আরো বেশী বিপর্যস্ত। রিমান্ডে আনার পর অবশিষ্ট স্বর্ণ এবং নগদ ২ লক্ষ ১১ হাজার টাকা নিয়ে ২ শাকিল একে অপরকে দোষারোপ করে কথা বললেও তদন্তকারী কর্মকর্তা অজানা কারণে নমনীয় মনোভাব পোষণ করেন। ইয়াছিন আরাফাত শাকিলের বাবার কাছ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করলেও সেটা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি, আমাকে বলা হয়েছে সেই টাকা রীম জুয়েলার্সকে বন্ধকী বাবদ ফেরত দেওয়া হবে।আমার নগদ টাকা এবং স্বর্ণ চুরি হয়েছে আমি ক্ষতিগ্রস্ত এরপরেও পুলিশের টিমের জন্য একটা খরচ আমি ব্যবস্থা করে দিতে রাজি। কিন্তু এভাবে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাবী কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এই পর্যন্ত বিভিন্ন দিকে যাতায়াত খরচ বাবদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চাইলে বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান হবে।

জানতে চাইলে বাজুস চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি যীশু বণিক বলেন, রীম জুয়েলার্সে স্বর্ণ উদ্ধারে পুলিশ আসছে জেনে আমি সমিতির কয়েকজন নেতা পাঠিয়েছিলাম। মালিকের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে দুঃখ প্রকাশ করলেও মিনতি জুয়েলার্সের নিকট থেকে ৬ আনা স্বর্ণ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে, এসআই মোশাররফ হোসাইন বলেন হবিগঞ্জের ইয়াছিন আরাফাত শাকিলের নিকট থেকে উদ্ধারকৃত ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা কার কাছে জানা নেই। মিনতি জুয়েলার্সের নিকট থেকে ভুলবশত ৬ আনা ওজনের একজোড়া কানের দুল বাড়তি নেওয়া হলেও সেটা পরবর্তীতে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাদীর নিকট থেকে ৩০ শতাংশ হিস্যা দাবী এবং রিম জুয়েলার্সের মালিকের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে জানান।

এই ব্যাপারে জানতে হালিশহর থানার ওসিকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।

Check Also

চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হলেন আব্দুল আউয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক :অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে নিয়োগ দিয়েছে। …