
ঘোষণা ডেস্ক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে জনগণ আর বিভেদ–বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়।’
আজ বোরবার (৩ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয়বাদী ছাত্রদলের সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক বলেন, ‘চার কোটি নতুন ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদচক্র তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে হারানো ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবার কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য আগে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।’ এ সময় একাধিক ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ও ইংরেজি ছাড়াও আরও অন্তত দুইটি ভাষা শিক্ষার সুযোগ রাখার পরিকল্পনা জানান তারেক।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তোমরাই তোমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ তোমাদের সঙ্গে আছে, আগামীতেও থাকবে। গত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী হতাহত হয়েছেন। হামলা-মামলা, নির্যাতন, গুমের শিকার হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচার নিষ্ঠু নির্মমতা চালিয়েও ছাত্রদলকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।’
তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক’। তিনি এই স্লোগান দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত দেশে মানুষ আর বিভেদ চায় না।’
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শুধু ৩৬ দিন নয়, গেল ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে ছাত্র-জনতা। তাদের প্রাণ দেওয়ার লক্ষ্য একটাই। সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’
আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশে হাসিনাকে কোনো দিন রাজনীতি করার সুযোগ দেব না’: ফখরুল
ছাত্রদের মেধা ও বুদ্ধিমত্তার চর্চা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মেধা ছাড়া আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। আর জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা, মেধার চর্চা, এর মধ্য দিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশে ভারতবর্ষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা আশ্রয় নিয়েছে তার লোকবল নিয়ে। সেখান থেকে সে মাঝে মাঝেই হুমকি দিচ্ছে যে, তারা বাংলাদেশে আক্রমণ করবে। শুধু তাই নয়, এখানে তারা বিভিন্নভাবে গোলযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশে বিভক্তি সৃষ্টি করবার।’
সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদলকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশে কারও নেই। দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায়, ছাত্রদল চাইলে সেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে পারে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যদি নির্দেশনা দেন, নেতা–কর্মীরা সারা দেশ অবরোধ করে দিতে পারে।’
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ করে ছাত্রদল। আজ বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে সমাবেশ শুরু হয়। পবিত্র কুরআন তেলওয়াতের মধ্যে দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
সমাবেশ কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা আসতে থাকে শাহবাগে। শাহবাগ মোড়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। শাহবাগ মোড় থেকে টিএসসির সড়ক, মৎস্য ভবন সড়ক ও কাঁটাবনের সড়কে অবস্থান করছে দলটির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ কেন্দ্র করে শাহবাগ এলাকায় যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ে মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ তখনো চলছিল। রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে সমাবেশস্থলে যোগ দিচ্ছিল। নেতাকর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা নিয়ে স্লোগানে মুখর করছিলেন এলাকা। কেউ কেউ রাস্তায় বসে ছিলেন, আবার কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন আশপাশে। শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় এই ভিড় আরও চোখে পড়ার মতো হয়ে ওঠে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ‘আজ শাহবাগে ছাত্রদলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা বাধাগ্রস্ত ছিল। সেই সময়ে জীবন বাজি রেখে তরুণরা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আজকের সমাবেশ সেই সাহসী তরুণদের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতিফলন।’
নাছির আরও বলেন, সমাবেশে লাখো নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেবেন বলে তারা আশা করছেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
এদিকে, একই উপলক্ষে বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বছরের এই দিনে দলটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ১৬ বছরের শাসন শেষে ক্ষমতা ছাড়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। এই দিনটিকে স্মরণ করেই পৃথকভাবে সমাবেশ করছে ছাত্রদল ও এনসিপি।
সমাবেশ ঘিরে শাহবাগ, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় জনসমাগম বেড়ে যাওয়ায় যান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি জানিয়েছে, শাহবাগ ক্রসিংয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে, ফলে ঢাকাবাসীকে বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।