
ঘোষণা ডেস্ক :আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চাঁদাবাজদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে মাঠে নামছে পাঁচটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা। পুলিশ অধিদপ্তর, ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব এবং পুলিশের বিশেষ শাখাকে (এসবি) এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনের আগেই তালিকাভুক্তদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ১৩ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে।
কমিটির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সেই বৈঠকে বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা যাতে সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনকালীন সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে একযোগে ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেখা গেছে, কিছু অসাধু ও উসকানিদাতা চক্র পরিকল্পিতভাবে জনগোষ্ঠীর একাংশকে উত্তেজিত করে সহিংসতা তৈরি করছে। এসব সহিংসতা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হচ্ছে, যা সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরো বলেন, ‘গুজব, মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে। সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।’
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি, অপপ্রচার রোধ, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি এবং মাঠ পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা জোরদারের পাশাপাশি সারা দেশের চাঁদাবাজদের একটি তালিকা তৈরি করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ও স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পাশাপাশি চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান উদযাপনকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিস্ট শক্তির যেকোনো নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অন্তত ১৪টি মহানগর ও জেলায় যোগাযোগ করে চাঁদাবাজদের তালিকা করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সচিবালয়ের আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গুলশানে চাঁদাবাজদের আমরা ছাড় দিইনি। কোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না—সে যত বড় লোকই হোক, যত প্রভাবশালী হোক না কেন।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাতে গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় আটক হন পাঁচ ছাত্রনেতা।
তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পর্যায়ের সমালোচনায় উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। এর পেছনেই আসে রাজশাহীতে ১২৩ জন ‘চাঁদাবাজের’ তালিকা, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়ে।
তালিকায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৪৪ জন, আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াত-শিবিরের ছয়জনের নাম রয়েছে। বাকি ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় না দিয়ে ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী—সংস্থাগুলো পৃথক পৃথক তালিকা তৈরি করবে; পর্যালোচনা ও যাচাই শেষে একটি একক, পূর্ণাঙ্গ তালিকা নির্বাচন পূর্বে চূড়ান্ত করা হবে এবং তালিকাভুক্ত সব ‘চাঁদাবাজের’ বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চলবে।