শিরোনাম
Home / Uncategorized / কম বয়সে মৃত্যুবরণকারীরা বেহেশতের প্রজাপতির মতো

কম বয়সে মৃত্যুবরণকারীরা বেহেশতের প্রজাপতির মতো

হাদিসে আছে, হজরত আবু হাসান (রহ.) বলেন, আমি সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমরা অন্তরে সান্ত্বনা পেতে পারি? তখন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তাদের কেউ যখন পিতা কিংবা মাতা-পিতা উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধানের কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় কিংবা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। -সহিহ মুসলিম: ৬৩৭০

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেছেন, নবী কারিম (সা.) এ হাদিসে বোঝাচ্ছেন, যে শিশু দুনিয়ায় অল্প বয়সে মারা যায়, সে জান্নাতে থাকবে।

কেয়ামতের দিন সেই শিশু তার মা-বাবাকে চিনে নেবে এবং জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তাদের কাপড় আঁকড়ে ধরবে আর আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। ফলে আল্লাহ তাকে এবং তার বাবা-মাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবেন। সন্তান হারানোর কষ্ট অনেক বড় হলেও হাদিসের শিক্ষা হচ্ছে নিজেকে শক্ত করে ধৈর্য ধরলে আল্লাহ জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। শুধু এই হাদিস নয়, আরও অনেক হাদিসে এভাবেই সন্তান হারানো মাতা-পিতার প্রতি নবি কারিম (সা.) এভাবেই সান্ত্বনা দিয়েছেন। এর কয়েকটি হলো-

তারা জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে: 

মৃত্যুবরণকারী শিশুসন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। হজরত কুররা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বসতেন, তখন সাহাবিদের অনেকে তার কাছে এসে বসতেন। তাদের মধ্যে একজন সাহাবির ছোট একটি শিশুপুত্র ছিল। তিনি তার ছেলেকে পেছন দিক থেকে নিজের সামনে এনে বসাতেন। একদিন সে ছেলেটি মৃত্যুবরণ করল। ফলে সে সাহাবি খুব বিষণ্ন হয়ে পড়লেন। ছেলের শোকে তিনি নবীজি (সা.)-এর মজলিসে উপস্থিত হতেন না। কয়েক দিন তাকে না দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক ব্যক্তিকে দেখছি না কেন? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তার যে ছোট ছেলেকে দেখেছিলেন সে মৃত্যুবরণ করেছে।

পরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, তোমার সে ছেলেটির কী হয়েছে? তিনি বলেন, ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে। তখন নবী কারিম (সা.) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন। তারপর বলেন, হে অমুক! তোমার কাছে কোনটা বেশি পছন্দনীয়, তার দ্বারা তোমার পার্থিব জীবন সুখময় করা, নাকি কাল কেয়ামতে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে তুমি প্রবেশ করতে চাইবে তাকে সেখানেই পাওয়া, যেখানে সে পৌঁছে তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেবে? তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! বরং সে আমার জান্নাতের দরজায় গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে দেবে; এটাই আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে তোমার জন্য তাই হবে।’ -সুনানে নাসাঈ: ২০৯০

অপ্রাপ্ত বয়স্ক মৃত সন্তানের মা-বাবা জান্নাতে যাবে: 

সন্তান হারানো মা-বাবার জন্য এর চেয়ে বড় সান্ত্বনা আর কী হতে পারে- তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যেকোনো মুসলিম ব্যক্তির এমন তিনটি (সন্তান) মারা যাবে, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি, আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমতে তাদের মা-বাবাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। -সহিহ বোখারি: ১৩৮১

মা-বাবার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা:

শিশুসন্তান হারানো মা-বাবার জন্য তৎক্ষণাৎ জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা এসেছে হাদিস শরিফে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহতায়ালা তার ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে কি ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আবার আল্লাহ প্রশ্ন করেন, তোমরা তার হৃদয়ের টুকরাকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। আবার তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ…পাঠ করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরি করো এবং তার নাম রাখো বাইতুল হামদ বা প্রশংসালয়। -সুনানে তিরমিজি: ১০২১

আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুনিয়া থেকে চলে যাওয়া শিশুসন্তানরা জান্নাতের পাহাড়ে অবস্থান করে। তাদের লালন-পালন করেন হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত সারা (আ.)। কেয়ামতের দিন তাদেরকে তাদের মা-বাবার কাছে ফেরত দেওয়া হবে। -সহিহুল জামে: ১০২৩

Check Also

কোটা সংস্কার আন্দোলন : সারাদেশে সহিংসতায় প্রাণ গেলো ৬ জনের

ঘোষণা ডেস্ক :চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সারাদেশে ছয়জন …