
নিজস্ব প্রতিবেদক :কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানাধীন পিরিজপুর বাজারে নারী সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা রুনা আক্তার রূপার উপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন নাটকীয়তার পর মামলা হওয়ার ৩দিন পেরিয়ে গেলেও অজানা কারণে কোন আসামিকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আসামীরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এমনকি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে চা-চক্রে মেতেছেন মর্মে জানা গেছে।
মামলাসূত্রে জানা যায়, আসামিরা পিরিজপুর বাজারে রুনা আক্তার রূপার ক্যাবল ব্যবসা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। বৃহস্পতিবার(১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আসামিদের হামলায় আহত হয়েছেন ক্যাবল মালিক ও সাংবাদিক রুনাসহ ৩জন। উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী রুনা আক্তার রূপা বাদী হয়ে হামলার সাথে সরাসরি জড়িত মাহিন মিয়া, মো: শাহীন মিয়া, রকি মিয়া, তারেক মিয়া, ডালিম মিয়া, সাহাবুল, সাদেক মিয়া এবং হোসেন মিয়াসহ আরো ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ১৩/০৪/২০২৫ ইং তারিখের বাজিতপুর থানার মামলা নং-১২, মামলার ধারা-১৪৩, ৪৪৮, ৩২৩,৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৫৪, ৩৭৯ এবং ৫০৬।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদিনীর ক্যাবল ব্যবসা দখলে নিতে আসামীরা সুপরিকল্পিতভাবে এই নৃশংস হামলা চালায়। এতে বাদিনী ছাড়াও তার ছোট ভাই আব্দুল কাদির এবং স্বামী সাংবাদিক নূরুল কবিরও আহত হন। ঘটনার তারিখ ও সময়ে আসামীরা বেআইনিভাবে অফিসে ঢুকে বাদিনীর ছোট ভাই কাদিরকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে চাইলে এতে বাদিনী ও তার স্বামী বাঁধা দিলে আসামিরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ৩ জনকেই এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। আসামীরা বাদিনীকে শ্লীলতাহানির পর গলা টিপে হত্যা চেষ্টা করে। তার মাথায় কিরিচের কোপ দেওয়ার পর তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তার সাথে থাকা ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এবং তার ভাই কাদিরের নিকট থেকে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও নগদ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীরা আহতদেরকে উদ্ধার করে বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্বামীকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে এবং তার ভাইকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান ভাগলপুর তদন্ত কেন্দ্রর দায়িত্বে থাকা এসআই মো: অহিদুল ইসলাম।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মামলা দায়েরের ৩দিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় বিস্মিত হন এলাকাবাসীরা। কয়েকজন এলাকাবাসী জানান স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থাকায় আসামিদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতেছে না। এছাড়া নাম প্রকাশ না করে ২জন স্থানীয় লোক জানান মামলার পরদিন অর্থাৎ ১৪ই এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো: অহিদুল ইসলামের সাথে এজাহারভুক্ত ৪-৫জন আসামি একসাথে বসে চা-নাস্তার আড্ডায় মেতেছিলেন, যা তারা নিজ চোখে দেখেছেন।
স্থানীয়রা আরো জানায়, আসামীরা আগে আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল জুয়েল এবং তার ভাই ভূমিদস্যু মামুনের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো। এখন তারা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে খোলস পাল্টিয়ে তথাকথিত কয়েকজন বিএনপি নেতার কর্মী পরিচয় দেয়।
মামলার বাদিনী অভিযোগ করে বলেন, এমন জঘন্য ঘটনার এতদিন পরে একজন আসামিও গ্রেফতার না হওয়া রহস্যজনক। আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদেরকে খুঁজে না পাওয়ার গল্প সবারই জানা। এই ঘটনায় মামলা না করে স্থানীয় সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করার জন্য যেসব প্রভাবশালীরা প্রস্তাব করেছিলো তারাই আসামীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রেখেছেন। মামলার পর আসামীরা আরো বেপরোয়া হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসামীরা উল্টো তার বাড়ীতে গিয়ে তার ভাই কাদিরকে খুঁজতেছেন। বাড়ী থেকে বের হলে তাকে গুম-খুনের হুমকি দিচ্ছেন। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম বলেন, আসামিদের সাথে চা-চক্রের বিষয়টি সত্য নয়। আসামিদের মধ্যে তিনি শুধু ৩জনকে চিনেন। মামলার পরদিন তিনি এলাকায় ছিলেন কিন্তু কোন আসামিকে দেখেন নি। তিনি থানার কাজে ঢাকায় গেছেন, এসে আসামিদের গ্রেফতারে দ্রুত অভিযান পরিচালনার কথা জানান।
জানতে চাইলে বাজিতপুর থানার ওসি জানান, আসামি গ্রেফতারে পুলিশের গাফেলতির কোন সুযোগ নেই। মামলা হয়েছে, আসামীদেরকেও গ্রেফতার করা হবে।