
বিশেষ প্রতিনিধি :রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি এক মাস পিছিয়েছে। আগামী ২ জানুয়ারি জামিন আবেদনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার(৩ নভেম্বর) চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। তবে শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এদিন তার পক্ষে কোনো আইনজীবীও শুনানিতে দাঁড়াননি।
চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ থাকায় সকাল থেকে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য আদালত এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। আদালতের প্রবেশমুখে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া সব যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। আদালতের প্রবেশমুখেই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতের নাজির নেছার আহমদ বলেন, আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ জামিন পেছানোর আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি পিছিয়েছেন। আগামী ২ জানুয়ারি এই মিসকেস মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেন মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ শতাধিক আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি পেছানোর আবেদন করে। পরে আদালত আগামী ২ জানুয়ারি পরবর্তী জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এডিসি (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, চিন্ময় দাসের জামিন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারক আগামী ২ জানুয়ারি আবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তাছাড়া আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম। জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর সেদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে ফের জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি। চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
এদিকে আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আসামি করে গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে একদল আইনজীবী। দাবি মানা না হলে টানা আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের ইসকন পরিচালিত মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাসকেও আসামি করা হয়। মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে জানানো হয়, কোতোয়ালি থানার ওই মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।