
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে পিতাকে না পেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে বড়ুয়া ছেলেকে অস্ত্রসহ চালান। টেকনাফে আওয়ামী লীগ নেতা পিতাকে না পেয়ে স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে অস্ত্রসহ চালান করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ছোট্ট রাফি ৭ম শ্রেণির ছাত্র। বাবা হ্নীলা ইউপি’র সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল মেম্বার। শিশুটির বাবা আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে জড়িত। স্থানীয়রা বলেন, বাবা’র অপরাধ থাকতে পারে, প্রচলিত আইনে দোষী হতে পারে। কিন্তু বাবা রেজাউল মেম্বারকে বাড়িতে না পেয়ে তার ছেলে রাফি’কে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। অতপর বৃহস্পতিবার অস্ত্র দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
রাজনীতি, দেশ বা রাষ্ট্র কী বুঝে ওঠার আগেই অবুঝ রাফি অস্ত্র মামলা কাঁধে নিয়ে চার দেয়ালের ভেতরে দিন কাটাচ্ছে। এমন ঘৃণ্য ও প্রতিহিংসার রাজনীতি কারোর জন্য শুভনীয় নয় বলে দাবী করে ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী নিরপরাধ রাফির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।
সূত্র জানায়, বুধবার গভীর রাতে টেকনাফ থানা পুলিশ হ্নীলা ৫ নং ওয়ার্ডে কয়েকটি বাড়ীতে অভিযান চালায়। তন্মধ্যে সৌদি প্রবাসি নুরুল আমিনের বাড়িতে একটি রিভলবার পায়। এই অস্ত্রটি আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল মেম্বারের বলে পুলিশের দাবী। এ কারণে তার চাচাতো ভাই আলী মোহাম্মদ ফোরকান ও রেজাউলের স্কুল পড়ুয়া শিশু রাফিকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার আলী মোহাম্মদ ফোরকানকে সন্দেহ জনক দন্ডবিধি মতে আদালতে সোপর্দ করলেও রেজাউলের স্কুল পড়ুয়া শিশু রাফিকে অন্যের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দিয়ে চালান করে আদালতে। একই মামলায় তার পিতা রেজাউল মেম্বারকে ২ নং আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় টেকনাফে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা নি:শর্তে শিশু শিক্ষার্থী রাফির মুক্তি দাবী করেছেন।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে এক অভিযানের সময় হ্নীলার দরগাহ পাড়ার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে দুজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আটক করা হয় তাউসিফুল করিম রাফিকে। তার ডান হাতে থাকা একটি নীল রংয়ের শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, ৪০ রাউন্ড নীল রংঙের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, শিক্ষার্থী রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার বাবা রেজাউল করিমের অস্ত্র এটি। তার বাবা তাকে এটি পাশের বাসার নুরুল আমিনের বাড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দিয়েছেন। তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত রাফিকে কারাগারের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। পুলিশের দায়ের করা মামলায় বাবাকে পলাতক আসামি করা হয়েছে।
ওসি আরো বলেন, মুলত শিশুর রাফির বাবা রেজাউল করিম চিহ্নিত সান্ত্রসী ও ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসী কাজের জন্য লাইসেন্সবিহীন এই অস্ত্র মজুদ করেছিল।
রাফির বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু পুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলে খুবই মেধাবি। সে ২০২১ সালে হ্নীলা প্রি ক্যাডেট স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে ড. গাজী কামরুল ইসলাম বৃত্তি লাভ করে। ২০২১ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি ও ২০২২ সালে ৫ম শ্রেণিতে জি এইফ এইচ বৃত্তি পায়। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছেলে অংশ নিতে পারল না।
মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আকতার ও মৌলভী জামাল হোসাইনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন রেজাউল করিম। এ বিষয়ে সুফাইদা আকতার বলেন, ‘ওই দিন মধ্যরাতে পুলিশ তার ঘরে ঢুকে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে কিছু খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার আলমিরাতে অস্ত্র পেয়েছে বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়।’
মৌলভী জামাল হোসাইন জানান, ভোরে মসজিদের যাওয়ার পথে পুলিশের ওসি তাকে দাঁড় করান। ওই সময় রেজাউলের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করতে দেখেন। ওসি তাকে জানান, অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করেছে। এরপর একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। এটা মামলার সাক্ষী কি না জানি না।