শিরোনাম
Home / অপরাধ / চট্টগ্রামে বন কর্মকর্তাদের ভূমিদস্যুতা: আদালত ও ডিসির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন

চট্টগ্রামে বন কর্মকর্তাদের ভূমিদস্যুতা: আদালত ও ডিসির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন

এম. জিয়াউল হক : চট্টগ্রামের বায়েজিদে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি জবরদখল করে বন বিভাগের নিজস্ব সম্পত্তি বলে প্রচার করে ভোগদখলে মরিয়া বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। প্রায় ৫ কোটি টাকার এই জমি চিরস্থায়ীভাবে ভোগ দখলে রাখতে আদালত এবং ডিসির নির্দেশকে উপেক্ষা করে উল্টো ভূমি মালিকের ছেলেকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে রেঞ্জার আব্দুল মালেক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বায়েজিদ থানাধীন ডেবার পাড়স্থ জালালাবাদ মৌজার আর.এস ৬৬৯ নং খতিয়ানের ২৪১৩ নং দাগের, বি.এস ৯৬ নং খতিয়ানের ৮৩৪, ৮৩৬, ৭৪৩ নং দাগের এবং সৃজিত ৮৩৮, ৮৩৯ নং খতিয়ানের ৮৩৬ নং দাগের আন্দরে আপোষ চিহ্নিতমতে ১০ গন্ডা বা ২০ শতাংশ ভূমি ক্রয়সূত্রে মালিক হন দুই সহোদর বেলায়েত হোসেন এবং আবুল হোসেন। কিন্তু ২০০৯ সালে উত্তর বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা উক্ত ভূমি নিজেদের দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নিয়ে সেখানে সেমিপাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ভাড়া উত্তোলন করতেন তৎকালীন বন কর্মকর্তা মোজাম্মেল এবং নাজমুলের নেতৃত্বে একটা অসাধু চক্র। স্থানীয় থানায় অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পেয়ে
বেলায়েত হোসেন বাদী হয়ে বিজ্ঞ ৫ম সহকারী জজ আদালত, চট্টগ্রাম এ স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনায় অপর ৩৯/২০১০ নং মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত গত ১৯/০৬/২০১৯ ইং তারিখের রায় মূলে বিবাদী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম গং এর বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচার করেন। উক্ত আদেশ অধ্যাবদি বলবৎ আছে।

দূর্নীতিবাজ রেঞ্জার আব্দুল মালেক

এই আদেশ অমান্য করে তারা তাদের দখল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ২০২০ সালে বেলায়েত হোসেনের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে আবদুল আল মামুন বন বিভাগের এই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ প্রদান করলে বন কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে ভূমির দখল বুঝিয়ে দিবে বলে আজকাল করে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। ২০২৩ সালে আবদুল আল মামুন বিভাগীয় কমিশনারের নিকট অভিযোগ প্রদান করলে বিভাগীয় কমিশনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। কিন্তু অসাধু বন কর্মকর্তারা এই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দখল অব্যাহত রাখে। মালিকপক্ষের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত জায়গায় উচু বাউন্ডারি স্থাপন করে নেমপ্লেট লাগিয়ে দেয়। নেমপ্লেটে লিখা আছে নাসিরাবাদ এস.এফ.এন.টি.সি.র নির্মাণাধীন কার্যালয়।

পুনরায় জেলা প্রশাসকের নিকট প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে জেলা প্রশাসক তপশীলোক্ত ভূমি পরিমাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাটহাজারীর এসি ল্যান্ডকে আদেশ দেন। এসিল্যান্ড ১৯/১১/২০২৪ইং তারিখে ১ম দফায় এবং ২৩/১১/২০২৪ইং তারিখে ২য় দফায় পরিমাপ করে উক্ত ভূমিতে বন বিভাগের কোন স্বার্থ নেই বলে সীমানা খুঁটি দিয়ে চিহ্নিত করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৩ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন এবং উত্তর বন বিভাগের রেঞ্জার আব্দুল মালেকের নির্দেশে আব্দুল আল মামুন এবং সাংবাদিক শফিককে মারধর করে হাতকড়া পরিয়ে নন্দনকাননস্থ কার্যালায়ে এনে আটকে রাখে। সাংবাদিককে আটকে রাখার কারণ জানতে শতাধিক সাংবাদিক জড়ো হলে বনের নিরাপত্তা কর্মীরা অস্ত্র তাক করে গুলি করার হুমকি দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। পরে সাংবাদিকদের কঠোর অবস্থানের কারণে রাত ১২টার দিকে সাংবাদিক শফিককে ছেড়ে দিলেও ভূমি মালিক মামুনকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। মামলায় উল্লেখ করা হয় আসামি মামুন পাহাড়তলী মৌজার বন বিভাগের একটি জমি দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে গাছ কাটার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মামুনের চাচা মোশাররফ জানায়, জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে এসি ল্যান্ডের উপস্থিতিতে জমি পরিমাপের সময় বন বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল মালেকের নির্দেশে এসি ল্যান্ডের সামনে থেকে মামুনকে মারধর করে গাড়ীতে তুলে নিয়ে আসে বনরক্ষীরা। মামুনকে অফিসে এনে বনরক্ষীরা অনেক মারধর করে এবং রেঞ্জার মালেক জায়গা দাবী করবে না মর্মে মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাতে মামুন রাজি না হলে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠায়। বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের এরকম জঘন্য কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

এই ব্যাপারে জানতে রেঞ্জার আব্দুল মালেকের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা প্রশাসকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন বিভাগের সাথে ভূমি মালিকের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলমান। ব্যক্তি মালিকের পক্ষে আদালতের রায় থাকার পরেও উক্ত ভূমি বন বিভাগের বলে দাবি করে যাচ্ছিলো বন কর্মকর্তারা। তাই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমি হাটহাজারীর এসি ল্যান্ডকে বিরোধীয় জমি পরিমাপের জন্য বলি। পরিমাপের সময় বন বিভাগের লোকজন ভূমি মালিকের ছেলের সাথে অসদাচরণ করে তাকে আটক করেছে মর্মে তথ্য পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Check Also

আ.লীগের শেষ ৫ বছরে ১৬ হাজারের বেশি খুন

ঘোষণা ডেস্ক :বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ ও আন্দোলনের পতিত শেখ হাসিনা সরকারের শেষ পাঁচ বছরে দেশে ১৬ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *