ঘোষণা ডেস্ক : ছাত্রীসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা ধার নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই মেস পরিচালক আফসানা মিম বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। রবিবার (২৭ অক্টোবর) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে, শনিবার (২৬ অক্টোবর) ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বিষপান করেন।
মৃত আফসানা মিম মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের জনৈক মামুন মোল্লার মেয়ে। শহরের ঝিলটুলীতে একটি বহুতল ভবনের একাধিক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেস পরিচালনা করতেন তিনি।
গত বুধবার ভোরে তিনি কাউকে কিছু না বলে তার মালামাল নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তিনি অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে প্রচুর টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় পাওনাদারেরা মামলাও দায়ের করেন।
এরই মধ্যে শনিবার চট্টগ্রামের কোনও এক বন্ধুর বাসায় থাকা অবস্থায় তার স্বামী মোহাম্মদ সাব্বিরের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন মিম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেড় ঘণ্টা ধরে তিনি তার এই করুণ পরিণতির নানা কারণ তুলে ধরেন। তিনি এ সময় নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তার নানা চড়াই-উতরাই পেরোনোর কথাও বলেন। এ সময় তার কাছে কেউ টাকা পাবেন না বলে জানিয়ে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের কারণেই তার এই পরিণতি বলে জানান। তিনি মেসের ছাত্রীদের নিজের মেয়ের মতো বলে উল্লেখ করে তাদের অনেক ভালোবাসতেন বলেও জানান।
মিম হাতে বিষের বোতল নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ব্যবসাটা বড় হয়ে গেছে দেখে ওদের নজরে পড়ে গেছে। আজ ওরা আমাকে শেষ করে দিছে। যারা আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষ থেকে আজ দূরে সরিয়ে দিলো, তোরা ওদের কাউকে ছাড়িস না।’
বেশ কয়েকজনকে তার এই নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী করে লাইভ ভিডিওতে থেকেই বিষপান করেন তিনি। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রবিবার দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়। আড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বাবু মিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে একটি ১১তলা ভবনের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ‘আফসানা ছাত্রী হোস্টেল’ নামে একটি মেস চালু করেন মিম। ৬টি ফ্লাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী রয়েছেন। একই বিল্ডিংয়ের আরেকটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে সপরিবারে থাকতেন তিনি। গত বুধবার ভোরে হঠাৎ একটি হলুদ পিকআপভ্যান ও দুটি ভ্যানে করে তার পরিবারের সব মালামাল নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মিম।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আফসানা মিমের মরদেহ দাফন করা হয় ।