ঘোষণা ডেস্ক :কোরবানি উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার বায়না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচিত হওয়া যুবক মুশফিকুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) নিজাম উদ্দিন হাজারী।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে নিজাম হাজারী বলেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর ড. মো. মতিউর রহমানই তার বাবা। মতিউর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাসাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইবুনালের প্রেসিডেন্ট।
এর আগে ইফাতের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই বলে গণমাধ্যমে দাবি করেন মতিউর রহমান।
নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘ইফাত এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। ধারণা করছি, রাগ করে মতিউর রহমান ইফাতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। মতিউর রহমান নিয়মিত দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।’
কোরবানি উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার বায়না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচিত হন মুশফিকুর রহমান ইফাত। একাধিক ফেসবুক পোস্ট, কয়েকটি গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সাসাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইবুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে। তবে মতিউর রহমানের দাবি, ইফাত নামে তার কোনো ছেলে নেই।
ইফাতের ভাষ্য, তিনি আসলে ছাগলটি কেনেননি। সাদিক এগ্রোর মালিকের কথামতো ছাগল কেনার ‘অভিনয়’ করেছেন। অন্যদিকে সাদিক এগ্রো বলছে, ছাগলটি কেনার জন্য এক লাখ টাকা বায়না দিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত হওয়ার পর আর কেনেননি তারা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে। ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগল ১২ লাখ টাকায় কিনে ভাইরাল হন যুবক ইফাত। পরে জানা যায় তার বাবা রাজস্ব কর্মকর্তা। সরকারি চাকরি করে কীভাবে এতো টাকা দামের ছাগল কিনলেন, এ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।
ছাগল কেনার নামে অভিনয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে ইফাত বলেন, ‘সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান ভাই আমার খুব কাছের। তিনি আমাকে বলেন- খাসিটাকে একটা থাপ্পড় দাও, তাহলে দেখ সে কী করে, এরপর আমি এটি করেছি। তারপর ছবি তুলেছি এবং বলেছি হ্যাঁ, খাসিটি আমি কিনেছি। আসলে এটি কিনিনি বা কেনা হয়নি। আমার বাসাতেও আনা হয়নি।’
তাহলে সত্যিটা কী? সাদিক এগ্রোতে গিয়ে ছাগলটিকে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। সাদিক এগ্রো কর্তৃপক্ষ বলছে, ইফাত ছাগলটি কেনার জন্য এক লাখ টাকা বায়না দিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার পর আর নেননি।
এরপর ইফাতের কথিত বাবা রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি দাবি করেন, যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে থাকা ওই যুবককে তিনি চেনেনও না। তার একমাত্র ছেলের নাম আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব।
এদিকে ইফাত সম্পর্কে মতিউরের ছেলে বলে সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী নিশ্চিত করলেও কেন পরিচয় নিয়ে এতো লুকোচুরি সে বিষয়টি খোলাসা করেননি মতিউর রহমান।
এই রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছি, এমনভাবে ট্রোল হচ্ছে, যেটা আমার পরিবারের জন্য ক্ষতিকর। আমার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করে এখন দেশে আছে। কিন্তু জীবনে দামি গরু কেনা তো দূরের কথা, একটু ভিন্ন রকমের ছেলে সে। এসব কাজের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আপনারা খোঁজ নিলে জানবেন।’
তাহলে কীভাবে আপনার নাম এখানে এলো জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। এতে আমি বিব্রত। আমি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহায়তা চেয়েছি। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেব।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, এনবিআরের সদস্য মতিউর দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ, যিনি বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান ইফাত। ফেসবুকেও বাবা মতিউর রহমানের সঙ্গে ইফাতের যুগলবন্দি বেশ কয়েকটি ছবি দেখা গেছে।