শিরোনাম
Home / আদালত / ১২ আসামিই খালাস, আদালতে জ্ঞান হারালেন নিহতের স্ত্রী

১২ আসামিই খালাস, আদালতে জ্ঞান হারালেন নিহতের স্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি :চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার প্রবাসী মো. ইউসুফ আলীর  চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় রায়ে ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। এ সময় মামলার রায় শুনে আদালতেই জ্ঞান হারান মামলার বাদীনি নিহত ইউসুফ আলীর স্ত্রী।

একই সঙ্গে রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে যথেষ্ট গাফিলতি ও পক্ষপাতের পরিচয় দিয়েছেন। এ ধরনের কর্মকর্তা পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ রায় দেন।

খালাসপ্রাপ্ত ১২ আসামি হলেন– আজগর আলী (৫২), টিপু (২৮), মামুন (৩৩), আলী আকবর (৪৩), মাহবুবুল আলম (৩৩), সাগর খান (২২), মোমিন (২০), আলমগীর (৪০), আয়ুব আলী খান (৫৪), মোহসিনুল হক (৫৫), আবু তালেব (৩৮) ও আবু বক্কর (৫১)।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অশোক কুমার দাশ বলেন, ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে ১৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। রায়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা সবাই নিহতের পরিবারের। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও তারা সাক্ষী হননি ভয়ে। কেউ আবার দেশের বাইরে চলে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন সাধারণ ডায়েরি না করা, রক্তমাখা কিছু উদ্ধার না করা- এসব গাফিলতি উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে বুধবার (২৯ মে) চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এদিন আদালত এর আগে জামিন হওয়া সাত আসামিকে জেলহাজতে পাঠান। আগে থেকে জেলহাজতে ছিলেন চার আসামি। মামলার অভিযুক্ত আইয়ুব আলী ও নাজু ছাড়া সব আসামি জেলহাজতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার আদালত রায় দেন। রায়ে ১২ জনকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। মামলায় অভিযুক্ত ১৩ আসামির মধ্যে একজন শিশু হওয়ায় তার বিচার হবে শিশু আদালতে। তার নাম নেজাম উদ্দিন নাজু (১৭)। সে পলাতক। ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন। রায়ের সময় ১১ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী শাহিনুর আক্তার। এদিন আদালতেই জ্ঞান হারান তিনি।া

এ সময় শাহিনুর আক্তার বলেন, হত্যাকারীরা শুরু থেকেই মামলা তুলে নিতে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছিল। এমনকি আমার সন্তান ও দেবরকেও হত্যার হুমকি দেয়। হুমকির কারণে স্বামীর ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় থাকতে হয়েছে। আশা করেছিলাম আদালত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেবেন। কিন্তু ন্যায়বিচার পাইনি। আমি রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবো।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে এম আবু তৈয়ব তালুকদার সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলী এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তৈয়বের বড় ভাই প্রবাসী ইউসুফের ওপর হামলা চালান। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ইউসুফ আলীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে আজগর আলীসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

রাঙ্গুনিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ১২ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুইয়া।

মামলাটি চাঞ্চল্যকর বিবেচনায় দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার গেজেট প্রকাশ হয়। জেলা চাঞ্চল্যকর মামলা মনিটরিং কমিটির মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনিটরিং কমিটি মামলাটি ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলাটি আইন মন্ত্রণালয়ে যায়। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে সেটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

Check Also

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম

নিজস্ব প্রতিবেদক :চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন প্রকৌশলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *