শিরোনাম
Home / অপরাধ / চট্টগ্রামে নাচ শিখতে বাধা দেওয়ায় পালিত মেয়ের হাতে মা খুন

চট্টগ্রামে নাচ শিখতে বাধা দেওয়ায় পালিত মেয়ের হাতে মা খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :স্বামী মারা যাওয়ায় ২য় বিয়ে করেন আনোয়ারা বেগম। দ্বিতীয় সংসারে কোনো সন্তান না থাকায় একটি মেয়ে দত্তক নেন তিনি। মেয়েকে এতটাই ভালোবাসতে শুরু করলেন যে সবসময় তাকে চোখে চোখে রাখতেন। লক্ষ্য করলেন, মেয়ে হঠাৎ ইউটিউবে ভিডিও দেখে নাচের মুদ্রা অনুশীলন করছে। মায়ের মনে সন্দেহ জাগল, অমুসলিম ছেলের সঙ্গে মেয়ে কোনো প্রেমে জড়াল কিনা! এ নিয়ে শুরু হলো ঝগড়া। ইন্টার পড়ুয়া ১৭ বছরের পালিত মেয়েটিই শেষ পর্যন্ত বনে যান মায়ের খুনী।

শনিবার (২৫ মে) নগর পুলিশের পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, ২০ মে নগরের পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ছদু চৌধুরী রোডে চৌধুরী আবাসিক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় আনোয়ারা বেগমের পালিত মেয়েকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মাকে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দেয় কিশোরী মেয়েটি।

১৭ বছর বয়সী মেয়েটি স্থানীয় একটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নিহত আনোয়ারা বেগম সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা।

পুলিশ জানায়, আনোয়ারা বেগমের প্রথম সংসারে ৩ ছেলে আছে। প্রথম স্বামী মারা যাবার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই সংসারে কোনো সন্তান না হওয়ায় মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে দ্বিতীয় স্বামীও মারা যান। দ্বিতীয় স্বামীর বোনের লন্ডন থেকে পাঠানো টাকা এবং আগের সংসারের ৩ ছেলের সাহায্য নিয়ে তিনি পালিত মেয়েকে নিয়ে থাকতেন।

২০ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পালিত মেয়ে আনোয়ারার আগের সংসারের বড় ছেলে আরিফুল হক মাসুমকে ফোন করে জানায়, তার মাকে কে বা কারা মাথায় কাঠের টুকরা দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেছে। মাসুম দ্রুত ওই বাসায় গিয়ে মাকে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। কিন্তু আইসিইউতে শয্যা খালি না পেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় আরিফুল হক মাসুম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করেন।

নগর পুলিশের পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুর রহমান বলেন, মেয়েটি আনোয়ারা বেগমের অত্যন্ত আদরের ছিল। সম্প্রতি ইউটিউবের ভিডিও দেখে বাসায় ইয়োগা, যোগাসনসহ বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম শুরু করেন মেয়ে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেনের ভিডিও দেখে নাচের মুদ্রা অনুশীলন করতেন। এতে আনোয়ারা বেগমের মনে সন্দেহ হয় যে, মেয়ে অমুসলিম কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে মনোমালিন্য হয়। ২০ মে বিকেলে মেয়ে প্রাইভেট কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পর নাচের মুদ্রা অনুশীলন শুরু করেন। তখন আনোয়ারা বেগম বাধা দিলে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে মেয়ে কাঠের টুকরা দিয়ে মায়ের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। গুরুতর জখম হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান আনোয়ারা বেগম। পরে কাঠের টুকরাটি রান্নাঘরের পাশে একটি পরিত্যক্ত ডোবায় ফেলে দেয় মেয়ে। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে।

পাহাড়তলী থানার ওসি মো. কেফায়েত উল্লাহ বলেন, শনিবার (২৫ মে) আদালতের মাধ্যমে ওই মেয়েটিকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।

Check Also

কোটা সংস্কার আন্দোলন: প্রাথমিক তদন্তে সম্পৃক্ততা না পেলে মামলা থেকে বাদ

ঘোষণা ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া হত্যা ও অন্য মামলায় আসামিদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *