নিজস্ব প্রতিবেদক :কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করীম বলেছেন, আগে অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে দ্রুত মুক্তি পেয়েছে এমভি আবদুল্লাহ। তিনি জানান, জাহাজের সকল নাবিক-ক্রু সুস্থ আছেন। কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরুল করীম সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্তি পাওয়ার পর আজ রবিবার বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপ। সেখানেই এসব কথা বলেন মেহেরুল করীম।
মেহেরুল করীম বলেন, ‘১৩ বছর আগে আমাদের আরেকটি জাহাজ জাহান মনি জিম্মি হয়। তখন আমাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে জাহাজটি মুক্ত করতে সময় লেগেছিল। তবে তখনকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা দ্রুত এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত করতে পেরেছি।’
জাহাজ মুক্ত করার প্রক্রিয়া উল্লেখ করে মেহেরুল করীম বলেন, ‘জাহাজটি জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিনিয়ত সেটির পজিশন ট্র্যাক করতাম। কোথা থেকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করতাম। জিম্মির কয়েকদিন পর জলদস্যুদের একজন যিনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর সকল আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে আমরাও আমাদের দিক থেকে যোগাযোগ শুরু করি। এভাবে টানা মাসখানেকের যোগাযোগের সফলতাতেই মুক্ত হয় এমভি আবদুল্লাহ।’
মেহেরুল করীম বলেন, ‘দুদিন আগে আমরা আমাদের জাহাজের প্রতিটি ক্রু-নাবিকের ভিডিও নিয়ে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করি। প্রতিটি নিয়ম মেনে কাজ করা হয়েছে। জাহাজে ৬৫ জন জলদস্যু ছিল। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাকে জানান জলদস্যুরা জাহাজ থেকে স্পিডবোটে করে নেমে গেছে।’
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা মেহেরুল করীমের কাছে মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষমা চাচ্ছি। কোনো মুক্তিপণের বিষয়ে আমি আপনাদের কিছু বলতে পারব না। সকলের সঙ্গে আমাদের এই বিষয় নিয়ে এগ্রিমেন্ট হয়েছে। আমি এগ্রিমেন্টের বাইরে যেতে পারব না।’
সংবাদ সম্মেলনে কবীর গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘কিছু জিনিস আমাদের গোপন রাখতে হবে। আমরা জলদস্যুতাকে প্রোমট করতে পারি না।’
শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ১৯ বা ২০ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ দুবাই পৌঁছাবে। এরপর নাবিক-ক্রুরা ফ্লাইটে বা জাহাজে করে নাবিকেরা বাংলাদেশে ব্যাক করবে। তিনি জানান, নাবিক ও ক্রুদের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করা হবে তারা কিভাবে দেশে আসবেন।
এর আগে আজ রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিপণ সংক্রান্ত যে সংবাদ ও ছবি প্রচার করা হচ্ছে এসবের সত্যতা নেই। ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ ও সমঝোতার মাধ্যমেই নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের ফিরে আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ কয়লাবোঝাই এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। এ সময় জাহাজটিতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে তারা। নাবিকদের উদ্ধারে নানা চেষ্টা করা হয়। চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। কিন্তু অগ্রগতি আসতে সময় লাগছিল। ঘটনার পরপরই জাহাজটি উদ্ধারে যায় ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ।
এমনকি জাহাজটির জিম্মি নাবিকদের ঈদও কাটে বন্দী দশায়। তবে তাঁদের ঈদের দিন ভালো খাবার দেওয়া হয় বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। অবশেষে বাংলা নববর্ষের দিন সুখবর এল। নিশ্চিতভাবে এটি নতুন বছর বরণের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে।