ফিল্যান্সারের ব্যাংক ও বাইন্যান্স অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামে ডিবি পুলিশের সাত সদস্যসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) মহানগর দ্বিতীয় হাকিম কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা। আদালত অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মামলায় দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩৬৫ / ৩৮৭ / ৩৮৮ / ৪২০ / ৩৪ ধারায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।’
এর আগে ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া অভিযুক্ত ৭ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. রহুল আমিন, উপ পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন, উপ পরিদর্শক মৃদুল কান্তি দে, সহকারী উপ পরিদর্শক বাবুল মিয়া, সহকারী উপ পরিদর্শক শাহ পরাণ জান্নাত, কনস্টেবল মুমিনুল হক, আব্দুর রহমান ও জাহিদ হোসেন স্বাধীন। অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগে কর্মরত।
অভিযোগে বলা হয়েছে, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার গুলবাগ এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর ছিদ্দিক একজন ফ্রিল্যান্সার। সরকারের আইসিটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের লাইসেন্স তাঁর রয়েছে। এই পেশার পারিশ্রমিক বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা তাঁকে ডলারে পরিশোধ করে বিধায় আইনানুগভাবে তিনি আন্তর্জাতিক লেনদেনের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাইন্যান্স এর হিসাব পরিচালনা করেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি এলাকায় একটি কুলিং কর্নারে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় সাদা রঙের একটি হাইস গাড়ি থেকে নেমে আসামিরা ডিবি পরিচয়ে আবু বক্কর ছিদ্দিকের মোবাইল কেড়ে নেন। পরে তাঁকে ও ফয়েজুল আমিন নামে আরেকজনকে চোখ-মুখ বেঁধে গাড়িতে উঠিয়ে মনসুরাবাদ ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
পরে আবু বক্করের মোবাইলের পাসওয়ার্ড চান আসামিরা। দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক ডিজিটাল পাসওয়ার্ড ও আঙুলের ছাপ নিয়ে মোবাইল আনলক করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগীর বাইন্যান্স অ্যাকাউন্টে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৬০ ডলার ব্যালেন্স ছিল। যা বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ওই দিনই ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে আসামিরা ধাপে ধাপে ২ লাখ ৭২ হাজার ২২১ ডলার সরিয়ে নেন।
এছাড়া আবু বক্করের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের হিসাব থেকে পাঁচ লাখ ও সিটি ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয় আসামিরা।
অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামিরা নিজেদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে আবু বক্কর ও ফয়জুল আমিনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বায়েজিদ থানায় মামলা করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।
বাদী হুসনুম মামুরাত লুবাবা বলেন, তাঁর স্বামী আবু বক্কর ছিদ্দিক জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর ডবলমুরিং থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।