চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট বাসটার্মিনালে আইনজীবী- সাংবাদিকের উপর পরিকল্পিত হামলা হলেও উক্ত ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। যদিও হামলাকারীদের কবল থেকে ভুক্তভোগীদেরকে উদ্ধার করেন চান্দগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৯ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো: জিয়াউল হক বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাদীর সৌদি প্রবাসী ভগ্নিপতি হোছাইন আহমদ বাসটার্মিনাল সংলগ্ন শহীদ পাড়ার বাবুল হোসেনের নিকট থেকে ২০১৭ সালে বাসটার্মিনালে ২টি দোকান এবং বাদুরতলা এলাকায় ১টি বিল্ডিং বন্ধক নেন। বন্ধকীর শর্তানুযায়ী ৩ মাস ভাড়া প্রদান করলেও এরপর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে আর ভাড়া প্রদান করেননি। ২০১৯ সালে বাবুল হোসেন পালিয়ে বিদেশে চলে যান। তখন বাবুলের ভাই নাছির বলেন, ৬ মাসের মধ্যে বাবুল এসে সব লেনদেন শেষ করবেন। এই সময় বাদুরতলার বিল্ডিংটি ব্যাংক ঋনের দায়ে নিলামে চলে যায়। তখন বাবুলের ভাই নাছির ও হেলাল আর ১মাস সময় নেন। ২০২০ সালের দিকে এই ব্যাপারে চান্দগাঁও থানায় অভিযোগ প্রদান করা হলে থানায় একটি সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে বাবুলের পক্ষে নাছির উপস্থিত থেকে হিসাব নিকাশ করে বন্ধকীর মূল টাকা এবং ভাড়ার সব টাকা বুঝিয়ে দিবেন বলে অঙ্গীকার করেন। তখন থেকে করোনা মহামারীসহ নানা অজুহাতে ২-৩ মাস করে করে
দীর্ঘদিন সময় ক্ষেপন করেন নাছির ও হেলাল। উল্লেখ্য এই দীর্ঘ ৬ বছর দোকানের ভাড়ার সব টাকা নাছির এবং হেলাল আত্মসাৎ করেন।
নাছির ও হেলালকে না পেয়ে এই বিষয়ে দোকানের ভাড়াটিয়াদের সাথে যোগাযোগ করলে ঘটনার ৪-৫ দিন পূর্বে দোকানের সাবেক ভাড়াটিয়া ছাবের নাছিরের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার দিন সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে বৈঠকের প্রস্তাব দেন। বাদী সরল বিশ্বাসে ২ জন আইনজীবী এবং ৩ জন সাংবাদিককে সাথে নিয়ে বৈঠকে যান। সেখানে আগে থেকে নাছির ও হেলাল সন্ত্রাসী প্রকৃতির ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। একটি কুলিং কর্ণারে বসে আলোচনা শুরুর একপর্যায়ে নাছির ও হেলাল ক্ষেপে গেলে তাদের পক্ষে আগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ধর ধর বলে হামলা করে বাদীপক্ষের লোকজনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
এসময় বাদী মো: জিয়াউল হক চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল কবিরকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে বললে তিনি এএসআই সুমনের নেতৃত্বে একটি টিম প্রেরণ করে ভিকটিমদেরকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে জখমীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে রাত ১১ টার দিকে মুঠোফোনে ওসির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পরদিন থানায় এসে এজাহার দেওয়ার জন্য বলেন। পেশাগত ব্যস্ততা শেষ করে পরদিন অর্থাৎ বুধবার রাত ৮টার দিকে এজাহার নিয়ে থানায় গেলে ওসি জাহেদুল কবির সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে অজুহাত দেখিয়ে অজানা কারণে এজাহার গ্রহণ না করে আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন।
সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো: জিয়াউল হক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারী) নাছির, হেলাল, ছাবের জুয়েলসহ ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে ডিবিকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করতে নির্দেশ দেন।
ঘটনার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসটার্মিনাল এলাকার কয়েকজন দোকানদার বলেন রাত ৮টার দিকে হঠাৎ বহিরাগত ৩০-৪০ জন লোক জড়ো হয়। কিছুক্ষণ পরে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনে দোকান থেকে বের হয়ে দেখি ৫-৬ জন ভদ্রলোককে মারধর করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসলে সবাই পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি যাদেরকে মারধর করা হয় তারা সবাই উকিল এবং সাংবাদিক।
এই ব্যাপারে মামলার বাদী মো: জিয়াউল হক বলেন, প্রতারক বাবুলের ভাই নাছির ও হেলাল এবং অবৈধ ভাড়াটিয়া ছাবের সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে যাতে আমি ভয় পেয়ে যাই এবং দোকান-বিল্ডিং বন্ধকের টাকা দাবী না করি। ছাবেরের সাথে ভাড়াটিয়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অনেক আগে। সে যেই দোকানটি ভাড়া নিয়েছিলো বাবুলকে সেটার ভাড়া দিতো ৯ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন যাবত ঐ দোকানটি হানিফ কাউন্টারকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছে। দোকানের মালিকানা হস্তান্তর হলে ৬ হাজার টাকার দালালী হাতছাড়া হবে তাই ছাবের নাছির ও হেলালের সঙ্গে জোট করে ঘটনার পরিকল্পনা করেছে। ছাবের প্রথমে বহদ্দারহাট জামান হোটেলে বৈঠক করতে বলেছিলো, পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে টার্মিনালে যেতে বলে। এছাড়া জুয়েলের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও পতিতা ব্যবসার সংবাদ প্রকাশ করায় চরম প্রতিশোধ নিতে সে ঘটনায় অংশগ্রহণ করে। পুলিশ হামলাকারীদের কবল থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করে মামলা নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করলেও পরদিন অদৃশ্য শক্তির কারণে মামলা নেয়নি।
এএসআই সুমন বড়ুয়া বলেন, সেকেন্ড অফিসার স্যারের নির্দেশে আমি ঘটনাস্থলে টিম নিয়ে যাই এবং ঘটনার বিষয়ে সেকেন্ড অফিসার স্যারকে বিস্তারিত বলি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল কবির বলেন, আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা বৈঠকে যাওয়ার সময় তো আমাকে অবগত করেনি। তবুও পরবর্তীতে যখন একজন ফোন করে বললো তাদের উপর হামলা হচ্ছে তখন আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি তাই আমি এজাহার গ্রহণ না করে আদালতে মামলা করতে বলেছি।