শিরোনাম
Home / চট্টগ্রাম / হাটহাজারীতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বাঁশখালী বিএনপির ১৪ নেতাকর্মীর নামে মামলা

হাটহাজারীতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বাঁশখালী বিএনপির ১৪ নেতাকর্মীর নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাঁশখালীর গণ্ডামারা থেকে হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী। দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে বিএনপির তৃতীয় দফার অবরোধ শেষে ৯ নভেম্বর রাতে ককটেল ফাটিয়েছেন বাঁশখালী বিএনপির ১৪ নেতাকর্মী! ১০ নভেম্বর হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলায় আনা হয়েছে এমন অভিযোগ।

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী (৪৯), সাবেক ইউপি সদস্য আলী নবী (৪২), আবদুর রহমান (৪৮), আবদুল খালেক (৩৭), আনছার উদ্দিন (৩৬), মোহাম্মদ আমিন (৫৩), মোহাম্মদ সেলিম (৪২), আলমগীর মাহফুজ (৩৫), নুর মোহাম্মদ (৪৮), দেলোয়ার হোসেন (৪৮), নুর মোহাম্মদ (৩২), ছৈয়দ নুর (২৭), মোস্তফা আলী (৫০), মো. খোকনকে (২৫) আসামি করা হয়। এ ১৪ জনের মধ্যে লিয়াকত আলী ছাড়া বাকি ১৩ জনই তার অনুসারী।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক মো. রকিবুল হাছান বাদী হয়ে মামলাটি (মামলা নং-১০) দায়ের করেন। ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা। পরের রাত ১টা ১০ মিনিটে মামলাটি রেকর্ড হয়। বিস্ফোরক আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলাটি রেকর্ড হয়।

বাদী রকিবুল হাছান হাটহাজারী থানার ফতেপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মিঠাছড়া গ্রামের মো. আবদুল বাছেকের ছেলে। ওই মামলায় বাঁশখালীর ১৪ জনসহ ৫৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে ৩২ জন বিএনপি, যুবদল ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদলের উত্তর জেলা, হাটহাজারী উপজেলা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির পদধারী। অন্য ৯ জন হাটহাজারী জামায়াতের বিভিন্ন পদের নেতা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা গত ৫-৬ নভেম্বর টানা ৪৮ ঘণ্টা সড়ক পথ, রেলপথ এবং নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় হাটহাজারী এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মিছিলসহ নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর একই উদ্দেশ্যে ৮-৯ নভেম্বর টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। অবরোধ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে সাধারণ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ৯ নভেম্বর রাত অনুমান সাড়ে ১০টার সময় হাটহাজারী মডেল থানার ১২ নং চিকনদণ্ডী ইউপির ১ নং ওয়ার্ড ইসলামিয়ার হাট বাদামতল সংলগ্ন এশিয়ান পেপার মিলের পূর্বপাশে, সয়েল বিল্ডার্সের সামনে হাটহাজারী-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর প্রায় ১১০-১২০ জন লোক জড়ো হয়। এসময় বাদী তার কয়েকজন বন্ধুসহ ব্যক্তিগত কাজ শেষে চৌধুরীহাট বাজার থেকে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। মহাসড়কে জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে কয়েকজন বাদীকে দেখে চিনতে পারে এবং ১নং আসামি গিয়াস চেয়ারম্যানের (হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব) নেতৃত্বে অন্য আসামিরা দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে বাদী রকিবুলের পথরোধ করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে।

এতে আরও বলা হয়, ৫ নং আসামি (হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক) মো. ফখরুল হাসান ও ৬ নং আসামি (হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব) নুরুল কবির বাদীকে চড়থাপ্পড় মারেন এবং লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। ৭ নং আসামি (হাটহাজারী পৌর যুবদলের আহ্বায়ক) মির্জা মো. এমদাদুল হক, ৯ নং আসামি (কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য) মো. ফোরকান ও ১২ নং আসামি (হাটহাজারী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক) সাইফুল ইসলাম বাদীর পরণের শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া করেন। রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি এবং বৈদ্যুতিক আলোতে বর্ণিত আসামিদের দেখে বাদী চিনতে পারেন।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় আসামিরা বলতে থাকেন আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনে প্রতিদিন বিভিন্ন গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ জানমালের ক্ষতিসাধন করবে। প্রয়োজনে পুরো হাটহাজারীতে আগুন জ্বালাবে। হঠাৎ করে আসামিরা পরপর কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় বাদী বিকট শব্দসহ আগুনের ঝলকানি দেখতে পান বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। এরপর আসামিরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে চৌধুরী হাটের দিকে চলে যায়।

সংবাদ পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে দুইটি টিনের ছোট কৌটা সদৃশ বিস্ফোরিত ককটেল-এর অংশ বিশেষ, চারটি কালো স্কচটেপ মোড়ানো অবিস্ফোরিত ককটেল, ৬টি বিভিন্ন সাইজের গাছের লাঠি, ৫টি বিভিন্ন সাইজের ইটের ভাঙা টুকরা উদ্ধার করে রাত ১১টা ১০ মিনিটের সময় জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন।মামলায় আসামি হওয়া বাঁশখালীর ১৪ জনের প্রত্যেকের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা বাদীর মুঠোফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে রোববার বিকেলে ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী মো. হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, বাদামতল ঘটনাস্থলের পূর্বপাশে আমার বাড়ি। গরুর ভুসি কেনার জন্য আমি দোকানে যাচ্ছিলাম। এসময় রাস্তায় দেখলাম ২০-৫০-১০০ গাড়ির জ্যাম লেগে গেছে। ওখানে জ্যামের ৫০ হাত দূরে অন্ধকারের মধ্যে ২০-৫০টি ককটেল-বোমা ফুটছে। অনেক আওয়াজ। এসময় পালিয়ে আমরা রাস্তার পশ্চিম পাশে দোকানে ঢুকে গেছি। ১০ মিনিট পরে পুলিশ এলে আমরা সেখানে গেছি। পুলিশ এসে রাস্তার উপর থেকে ইটের টুকরা সরিয়ে দিচ্ছে। লাঠিগুলো সরাচ্ছে। আমি যখন দেখছিলাম, তখন আমার সাক্ষী নিয়ে ফেলেছে। লোকজন দেখেছি। পুলিশ যখন আসছে, তারা (আসামিরা) অন্ধকারে ঢুকে যাওয়াতে তাদের চিনতে পারিনি। তাদের ১৫-১৬ জন লোক ছিল।

সাক্ষী হানিফ হাটহাজারী থানার ফতেপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের জলিল ড্রাইভারের বাড়ির আবদুস সবুরের ছেলে।

মামলার ৪৯ নং আসামি বাঁশখালী থানার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা ৮ নং ওয়ার্ডের মাস্টার মোহাম্মদ উল্যাহর ছেলে আলমগীর মাহফুজ। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে আমি বাঁশখালী ছিলাম। আমরা শুনেছি হাটহাজারী থানায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে দায়ের হওয়া একটি মামলায় গণ্ডামারা ইউনিয়নের ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ৭-৮ জন বিএনপির সমর্থক হলেও তারা খুবই গরিব। এলাকায় কৃষি কাজ করে চলে। তারা হাটহাজারী কোথায়, সেটাও হয়তো জানেন না। চট্টগ্রাম শহরেও তাদের আসা হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হাটহাজারীর ওই মামলায় আসামি করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ, এখানে অন্য উদ্দেশ্য আছে। কারণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলে পুরো বাঁশখালীর বিএনপির নেতাদের আসামি করা হতো। কিন্তু আসামি করা হয়েছে শুধু গণ্ডামারা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের ১৪ জনকে। তারা গণ্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আমাদের গণ্ডামারা ইউনিয়নে একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এটা নিয়ে এলাকায় পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। সম্ভবত ওখানে ফায়দা লুটতে একটি চক্র কৌশলে হাটহাজারীর মামলায় আমাদের আসামি করে দিয়েছে। তা না হলে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা সম্পাদক হয়ে ৮০ কিলোমিটার দূরের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের নির্দিষ্ট ১৪ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা জানার কথা নয়।

এ ব্যাপারে হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মনিরুজ্জামা বলেন, আমরা লিখিত এজাহার পেয়ে মামলা নিয়েছি। আমাদের দায়িত্ব হলো কোনো অপরাধ হলে তার মামলা নেওয়া। এখানেও তাই হয়েছে। আমরা মামলা নিয়েছি। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে দেখবেন, আসলে কী ঘটেছিল। আশা করি, যা ঘটছে, তা তদন্ত করে তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেবেন।

Check Also

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ইয়াবাসহ বাসের যাত্রী গ্রেফতার

ঘোষণা ডেস্ক :চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর টোল প্লাজা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১হাজার ৯৫০ পিস ইয়াবাসহ এক বাসযাত্রীকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *