শিরোনাম
Home / অপরাধ / বাঁশখালীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও প্রতারক কাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

বাঁশখালীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও প্রতারক কাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধি : অর্ধ ডজনের বেশী মামলার আসামি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন সরলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও প্রতারক কাদের দীর্ঘদিন যাবত পালিয়ে বেড়ালেও অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। শুক্রবার(২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাঁশখালী থানার এসআই এমরানের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম এই দূধর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাঁশখালী থানাধীন সরল ইউনিয়নের হাজীরখীল এলাকার মৃত ওমদ আলী প্রকাশ ওমদা মিয়ার পুত্র আব্দুল কাদের পারিবারিক দারিদ্র্যতার কারণে ছোটবেলা থেকে উশৃংখল প্রকৃতির ছিলো। জীবন-জীবীকার তাগিদে ২০১০ সালে চট্টগ্রামে এসে ৫ হাজার টাকা বেতনে চকবাজার এলাকার ডিশ সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্কাই লিংক এর বিল কালেকশনের চাকরি নেন। এই চাকরীর পর থেকে কাদের দারিদ্রতাকে বিদায় করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে কাদের আইপিএল জুয়ায় জড়িয়ে পড়লে ২০১৫ সালে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়।কাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে গ্রামের বাড়ীতে পালিয়ে যায়। এসময় সে স্থানীয় রাজনৈতিক পাতি নেতাদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে চাঁদাবাজি, চুরি- ডাকাতি, প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এলাকার লোকজনকে সে বলতো চট্টগ্রাম শহরে মাফিয়াদের সাথে তার ওঠাবসা রয়েছে, তার দ্বারা সবকিছু সম্ভব। লবণ ও সবজি চাষীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদাবাজি করে ছদ্মবেশ ধারণের জন্য নিজেকে লবণ ও সবজি চাষী বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করে।

২০১৬ সালের এপ্রিলে গন্ডামারায় এস আলমের কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে গ্রামবাসীর বিদ্রোহ দমনে পুলিশের গুলিতে নিহত ৪ জনের মধ্যে ১ জন তার আপন ভাই। সরকার ও কোম্পানির তরফে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে কাদের উক্ত টাকার বেশীরভাগই আত্মসাৎ করে। এরপর থেকে কাদের এলাকায় বলে বেড়ায় যে, সংঘর্ষে তার ভাইয়ের মৃত্যুর কারণে এস আলম পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয়। তাই এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অসহায় লোকজনকে চাকরী দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ হাতিয়ে নেয়। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ভিসা দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে অনেক দরিদ্র পরিবারকে রাস্তায় নামিয়েছে এই প্রতারক কাদের।

এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা যায়, এই চাঁদাবাজ কাদের একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে প্রতিনিয়ত চুরি- ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তার গ্রুপের লোকদের পিস্তলসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। লবণ, সবজি ও মাছ চাষীদের নিকট থেকে দাবীকৃত চাঁদা না পেলে তার গ্রুপের সদস্যরা লবণের পলিথিন কেটে , মাছের প্রজেক্টে বিষ ঢেলে এবং সবজির ক্ষেতে কেমিক্যাল ছিটিয়ে চাষীদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন পূর্বক চাষীদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। এছাড়া কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্ক্র্যাপ চুরির অভিযোগও রয়েছে কাদেরের বিরুদ্ধে। এতো কিছুর পরেও এই ভয়ংকর সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে নির্যাতিতদের অধিকাংশই মুখ খুলার সাহস পান না। কারণ তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে নির্যাতনের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়। জেল থেকে বেরিয়ে নির্যাতন করবে সেই ভয়ে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরেও কেউ মনের আনন্দ অনূভুতি প্রকাশ করার সাহসও পাচ্ছে না।

কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, সন্ত্রাসী কাদের তার অসৎ পথে উপার্জনের টাকায় আনোয়ারা থানাধীন হাইলধর ইউনিয়নের উত্তর গুজরা এলাকায় তার এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ীর পাশে অনেক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। পুলিশ যখন দাগী আসামি ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তখন সে আনোয়ারায় তার উক্ত নিকটাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। এত সম্পদের মালিক হওয়ার পরেও কাদের নিজ এলাকায় এমন ছদ্মবেশ দেখায় যেন সে দিনে এনে দিনে খায়।

তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অর্ধ ডজনের বেশী মামলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো হলো- বাঁশখালী থানার মামলা নং- ১৮(৭)১৬- ধারা: ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৬, ৩৭৯, ৫০৬ মামলা নং-১১(৪)২১ ধারা: ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬ মামলা নং ৩(১০)২১ ধারা: ৩২৩, ৩২৬, ৩৭৯, ৫০৬ এবং
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ ভিসা প্রতারণার অভিযোগে চলমান মামলা নং- ৯৭৪/২১।

সন্ত্রাসী কাদেরকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল উদ্দীন।

Check Also

সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম

নিজস্ব প্রতিবেদক :চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন প্রকৌশলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *