শিরোনাম
Home / অপরাধ / খুলশীতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় স্বস্ত্রীক জখম হয়ে চাকরীও হারালেন প্রাইভেট কার চালক

খুলশীতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় স্বস্ত্রীক জখম হয়ে চাকরীও হারালেন প্রাইভেট কার চালক

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের খুলশীতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে চাকরীও হারালেন দরিদ্র প্রাইভেট কার চালক কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া। হামলার ঘটনার সময় স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে এসে শোর চিৎকার করলে স্ত্রী মরিয়ম বেগমের উপরও চালানো হয় নির্যাতন। এমন পাশবিক ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে উত্তর খুলশী ৪ নং রোডের সানমার স্লিকি বিল্ডিংয়ে। উক্ত ঘটনায় কামাল উদ্দীন ভূঁইয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে ১০/০৯/২০২৩ ইং তারিখে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আওরঙ্গজেট(৫৫), আওরঙ্গজেটের ছেলে জাওয়াত তানজিন(৩০) এবং ইমরুল কায়েস(৫০) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়। আদালত মামলার তদন্তভার খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রদান করেন।

ভুক্তভোগী এবং মামলাসূত্রে জানা যায়, কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া প্রায় ১৩ বছর ধরে সানমার স্লিকি বিল্ডিংয়ে ডাক্তার এম মজুমদারের ব্যক্তিগত গাড়ীর চালক হিসেবে কর্মরত। চাকরীতে থাকাকালীন তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো এই বিশ্বস্থ চালক তার মালিকের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করে হামলার শিকার হলেও মালিক তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে না এসে উল্টো চাকরিচ্যুত করেছেন। কারণ হামলাকারীরা মালিকের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন এবং খুবই প্রভাবশালী।

ঘটনার সময় চালক তার মালিককে কর্মস্থল থেকে গাড়ীতে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিল্ডিংয়ের সামনে আসলে হামলাকারীরা গলিতে একটি নোহা গাড়ী পার্কিং করে সেখানে যাত্রী ওঠাচ্ছিলেন। রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা থাকায় ফ্ল্যাটে ঢুকতে প্রায় ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় লাগে। মালিককে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিয়ে গাড়ী পার্কিংয়ে রেখে চালক সিকিউরিটি গার্ডকে বলেন গলিতে এভাবে গাড়ী রেখে যাত্রী উঠানোর কারণে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। একথা শুনে প্রথমে আওরঙ্গজেট এবং ইমরুল কায়েস এসে কামালকে গালমন্দসহ মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে আওরঙ্গজেটের ছেলে জাওয়াত তানজিন এসে চেয়ার নিয়ে কামালের মাথায় আঘাত করে। পরবর্তীতে আরো ৪/৫ জন লোক এসে কামালকে বেধড়ক মারধর করে। ঘটনার খবর শুনে কামালের স্ত্রী ছুটে এসে শোর চিৎকার করলে হামলাকারীরা তাকেও মারধর করে পরনের শাড়ি-ব্লাউজের ছিড়ে শ্লীলতাহানি করে। পথচারীরা কামাল এবং তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে এসআই বেলালের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে ঘটনার সত্যতা পেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

ভুক্তভোগী কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার সাহেবের জন্য প্রতিবাদ করলাম, আর আমার সাহেব আমার পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করলেন। উনারা উঁচু তলার মানুষ তাই হয়তো আমার মত গরীব মানুষের দুঃখ বুঝলোনা। হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় আমি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতেছি। আমি প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনার বিষয়ে ডাক্তার এম মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কামাল আমার দীর্ঘদিনের চালক। আমি তার কোন খারাপ আচরণ লক্ষ্য করিনি। কিন্তু ঘটনার পর থেকে মহল্লার বিভিন্ন লোকজন বলতেছে তার আচরণ খারাপ, তাকে আর চাকরীতে রাখা যাবে না। যার সঙ্গে সমস্যা হয়েছে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ও বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি। উনারা সম্মানিত ও প্রভাবশালী লোক, আমিতো তাঁদের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না। আর কামালও বলছে তাঁকে বিদায় করলে তাঁর আপত্তি নেই। এই কারণে তাকে পুরো মাসের বেতন দিয়ে বিদায় করেছি। এখানে আমার কোন দায়বদ্ধতা নেই, আমি এখনো নতুন ড্রাইভার নিয়োগ করিনি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই বেলালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি যাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে তাদের সাথে ভুক্তভোগী কামালের মালিক অর্থাৎ ডাক্তার মজুমদারের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই তারা মীমাংসার ব্যবস্থা করবেন বলায় আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চলে আসি। পরবর্তীতে কামাল থানায় এসে লিখিত কোন অভিযোগও দেয়নি। তাই কোন ব্যবস্থা গ্রহণও সম্ভব হয়নি।

Check Also

ভারতে গ্রেপ্তার ৫ আওয়ামী লীগ নেতাকে কারাগারে প্রেরণ

ঘোষণা ডেস্ক : অবৈধভাবে অনুপ্রবেশসহ একাধিক অভিযোগে অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ ৫ আওয়ামী লীগ ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *