ঘোষণা ডেস্ক : শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রুমে প্রবেশ করতেই এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা বুট দিয়ে আমাকে নির্মমভাবে লাথি মারতে থাকে। আমি ছাত্রলীগের পরিচয় দিই, পরিচয় পাওয়ার পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এডিসি হারুনসহ অন্যরা। মারধরের একপর্যায়ে এডিসি হারুন তার পিস্তল দিয়ে আমার মুখ থেঁতলে দেন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতের নির্মম নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে বারবার গলা ভারী হয়ে উঠছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাইমের। এসময় তার চোখ ভিজে উঠতে দেখা যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে নাইম বলেন, আমাদের ওপর গতকাল রাতে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাতে শাহবাগ থানায় আটকে রেখে নাইম ছাড়াও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে নির্যাতন করেন সদ্য বদলি হওয়া ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগের ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১১১০ নম্বর ক্যাবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা পোস্টের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন ছাত্রলীগ নেতা নাইম।
তিনি বলেন, অ্যাডমিন ক্যাডার আজিজুল হক মামুন আমার এলাকার বড় ভাই। আমার ও ওনার বাড়ি গাজীপুরে। গতকাল (শনিবার) রাতে মামুন ভাই আমাকে কল করে বলেন শাহবাগের দিকে আসতে। আমি আর মুনিম তখন শাহবাগের দিকে যাই। আমরা শাহবাগে গিয়ে দেখি, মামুন ভাই বারডেমের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা মামুন ভাইয়ের কাছে যেতে যেতেই উনি বারডেমের কার্ডিওলজি বিভাগের দিকে চলে যান। আমরাও যেতে থাকি তার পেছন পেছন। সেখানে গিয়ে দেখি, এডিসি হারুন ও মামুন ভাই কথা কাটকাটি করছেন। আমি আর মুনিম বিষয়টি মীমাংসা করে দিই।
নাইম বলেন, বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পর শাহবাগ থানার ওসির নেতৃত্বে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে আসেন এডিসি হারুন। পুলিশের ওই দলটি মামুন ভাই ও মুনিমকে ধরে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। তাদের শাহবাগ থানায় নেওয়ার পর আমি নিজে থানায় যাই তাদের কী অবস্থা দেখতে। থানায় গিয়ে যখন আমি ওসির রুমে প্রবেশ করি, তখন এডিসি হারুনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ১০-১৫ মিনিট বুট দিয়ে আমাকে মারতে থাকে। কেউ কেউ আবার হাত-পা দিয়েও মারতে থাকে। এর মধ্যে এডিসি হারুন নিজের পিস্তল দিয়ে আঘাত করে আমার মুখ থেঁতলে দেন। আমাকে মারধর করার সময় রুমে এডিসি হারুন ছাড়া শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন এসআই ও কনস্টেবল ছিলেন।
ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়ায় এডিসি হারুন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন জানিয়ে নাইম বলেন, আমাকে যখন মারা হচ্ছিল তখন আমি এডিসি হারুনকে বলি, আমি ফজলুল হক হলের ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তখন সে আমাকে বলে, কীসের ছাত্রলীগ, আমি ছাত্রলীগ থেকে কোনো সুবিধা গ্রহণ করি না। ছাত্রলীগ পরিচয় পাওয়া পর আমার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। ছাত্রলীগকে গালাগাল করে আমাকে আরও মারতে থাকেন।
ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, মারধরের একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফেরার পর দেখি, আমি কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। আমার ঠোঁটে সেলাই হয় ৮-১০টা। ছাত্রলীগ আমার পাশে আছে। গতকাল রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার সঙ্গে দেখা করে গেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অভিভাবক হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই, এডিসি হারুনকে বরখাস্ত করে যেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়। তার বিচার হলে ছাত্রসমাজ সাধুবাদ জানাবে।
নাঈমের মা নাজমুন নাহার বলেন, আজ সকাল ৬টার দিকে আমার ছেলের এ অবস্থা জানতে পেরেছি। আমার ছেলে গিয়েছিল তার এক পরিচিত ভাইয়ের খোঁজ নিতে, তার কী হয়েছে। বিনা কারণে আমার ছেলেকে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো এডিসি হারুন ১০-১২ জনকে নিয়ে মারধর করে। আমার ছেলেকে মেরে ফেলার জন্যই এভাবে মারধর করেছিল হারুন। আমার ছেলের মাথা, মুখসহ সমস্ত শরীরে আঘাত করে মারধর করেছে হারুন।
তিনি বলেন, আমার সন্তান ছাত্রলীগ করে মার খেয়েছে, আর কোনো মায়ের সন্তান যেন এভাবে মার না খায়। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এডিসি হারুনের বিচার চাই। কোনো মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে না। আমার ছেলে গিয়েছিল মানুষের উপকার করতে। আমি এডিসি হারুনের গ্রেপ্তার চাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে ঘটনার পর রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) হারুনকে ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে বদলি করা হয়েছে। প্রথমে তাকে প্রত্যাহার করে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। এরপর বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়।