শিরোনাম
Home / অনুসন্ধান / চান্দগাঁওয়ে দিনমজুর ভাইকে পৈতৃক জমি থেকে বঞ্চিত করতে জাল দলিল সৃজন করলো সহোদর ভাই-বোন

চান্দগাঁওয়ে দিনমজুর ভাইকে পৈতৃক জমি থেকে বঞ্চিত করতে জাল দলিল সৃজন করলো সহোদর ভাই-বোন

বিশেষ প্রতিনিধি : বর্তমানের কিছু কিছু ঘটনা আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন মনে হয় আমরা আধুনিক সভ্যতায় নয়, প্রাচীন সভ্যতায় বসবাস করছি। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন ৫নং মোহরা ওয়ার্ডের চর রাঙ্গামাটিয়া এলাকার লাল মিয়া হাজীর বাড়ীতে। যেখানে ছোট ভাইকে পৈতৃক জমি থেকে বঞ্চিত করতে একজোট হয়ে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে আপন ভাই- বোনেরা। জাল ওয়ারিশ সনদ সৃজন করে ছোট ভাইয়ের অংশ বড় ভাইয়ের নামে রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে দলিল করে তাকে বাড়ী ছাড়া করতে তার বাসার বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে থেমে থাকেনি আপন ভাই- বোনেরা, সস্ত্রীক তার উপর সন্ত্রাসী হামলাও চালানো হয়। হয়রানি করতেছে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫নং মোহরা ওয়ার্ডের চর রাঙ্গামাটিয়া এলাকার লাল মিয়া হাজীর বাড়ীর মোহাম্মদ আলী ০৬/০৩/২০০১ ইং তারিখে মৃত্যুকালে স্ত্রী নূর বেগম, ২ পুত্র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, দেলোয়ার হোসেন, ৭ কন্যা যথাক্রমে নূর নাহার, সামশুর নাহার, নার্গিস আক্তার, জাহানারা, শামীমা আক্তার, শাহীনা আক্তার এবং রুনা আক্তার। মৃত্যুকালে তার স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিলো প্রায় ২৪ গন্ডা। পিতার মৃত্যুর পরে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন বড় ভাই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। দেলোয়ার অশিক্ষিত হওয়ায় সে এসব বিষয়ে নজর দিতো না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুচতুর বড় ভাই জাহাঙ্গীর ২৪/০৮/২০০৯ইং তারিখে মোহরা ৫নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর নাজিম উদ্দীনের নিকট মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য প্রদান করে একটি ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন, যেখানে ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেনের স্থলে গোলাম মোস্তফা নামীয় এক ব্যক্তিকে ওয়ারিশ দেখানো হয়। এই ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে ২৫/১১/২০০২ ইং তারিখে চান্দগাঁও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ২৬৫৮ নং সাফ কবলা দলিল সৃজন করা হয়। যেখানে গোলাম মোস্তফাকে দাতা এবং জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রহীতা দেখানো হয়। এই লন্ডন প্রবাসী প্রতারক জাহাঙ্গীর আলম উক্ত জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেখান মাসে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ভাড়া উত্তোলন করেন।

দেলোয়ারের স্ত্রীর উপর মনছুরের এ্যাকশন

জাহাঙ্গীর এবং ৭বোন তাদের যার যার অংশ বুঝে নিয়ে ভোগ- দখলে থাকলেও সহজ- সরল দেলোয়ার নিজের অংশ বুঝে না নিয়ে এক কোণায় ছোট একটি সেমিপাকা গৃহ নির্মান করে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। কারণ বড় ভাই এবং বোনদের উপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিলো।

দেলোয়ারের বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় ২৯/১০/২০২২ ইং তারিখে বড় বোন নূর নাহারের কাছে তাদের ওয়ারিশ সনদের একটি ফটোকপি চেয়ে নেন। দেলোয়ার অশিক্ষিত হওয়ায় সেটা পড়তে না পেরে তার (সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে ডিগ্রি অধ্যয়নরত) স্ত্রীকে দেখালে স্ত্রী জানায় এখানে ৩নং কলামে যেখানে দেলোয়ার হোসেনের নাম থাকার কথা সেখানে গোলাম মোস্তফার নাম দেওয়া হয়েছে। দেলোয়ার বিষয়টি মহল্লার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে দেখালে তারা জানায় নিশ্চয় পৈতৃক জমি আত্মসাৎ করতে এই জঘন্য কাজ করা হয়েছে।

এলাকার এক মুরুব্বীর পরামর্শে দেলোয়ার ০৭/০৬/২০২২ ইং তারিখে খাজনা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গেলে তহসিলদার জানান এই জমির খতিয়ান জাহাঙ্গীরের নামে সৃজিত হয়ে গেছে, যেহেতু তিনি সাফ বিক্রয় কবলামূলে মালিক হয়েছেন। এই তথ্য জেনে দেলোয়ার হতবাক হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) চান্দগাঁও সার্কেল অফিসে গিয়েও ঘটনার সত্যতা পান।

এই ঘটনায় অসহায় হয়ে দেলোয়ার প্রকৃত ওয়ারিশ সনদের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর জোবায়রা নার্গিস খানের নিকট ১১/১১/২০২২ ইং তারিখে লিখিত আবেদন করলে তিনি মহল্লার নেতৃবৃন্দকে সরেজমিনে তদন্ত করে মরহুম মোহাম্মদ আলীর প্রকৃত ওয়ারিশদের তালিকা প্রেরণের দায়িত্ব দেন। মহল্লা কমিটির সভাপতি – সম্পাদক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেলোয়ারকে মরহুম মোহাম্মদ আলীর পুত্র এবং গোলাম মোস্তফা নামের কোন ওয়ারিশ নেই মর্মে প্রতিবেদন প্রেরণ করলে কাউন্সিলর জোবায়রা নার্গিস খান ২৯/১২/২০২২ ইং তারিখে প্রকৃত ওয়ারিশ সনদ প্রদান করেন।

পরবর্তীতে দেলোয়ার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে জাল দলিল সৃজনকারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং জাল দলিল সৃজনে সহযোগী শ্রী অনিল কুমার দে, বিধান চৌধুরী, প্রদীপকে আসামি করে ১২৫/২০২৩ নং মামলা এবং বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতে জাহাঙ্গীর আলম, নূর নাহার, সামশুর নাহার, নার্গিস আক্তার, জাহানারা, শামীমা আক্তার, শাহীনা আক্তারকে আসামি করে ৪২০, ৪০৬, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ দঃ বিঃ মামলা রুজু করেন। মামলাগুলো আদালতে চলমান রয়েছে।

আদালতে মামলা দায়ের করায় আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে গত ১৭/১২/২০২২ ইং তারিখে দেলোয়ার হোসেন এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল নাঈমের উপর হামলা চালিয়ে বসতগৃহে লুটপাট চালায়। উক্ত ঘটনায় জান্নাতুল নাঈম বাদী হয়ে হামলাকারী সন্ত্রাসী মো: সাইফু, মো: ইয়াছিন, মো: আলী আকবর এবং জামির হোসেনকে আসামি করে ০৯/০১/২০২৩ ইং তারিখে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্তভার দিলে পুলিশ ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত মর্মে প্রতিবেদন প্রদান করেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বড় ভাই জাহাঙ্গীর জাল দলিল সৃজন করে পৈতৃক জমি আত্মসাৎ করে আমাকে বঞ্চিত করার মতো লোক নয়। তিনি আমার ভগ্নিপতি মনছুরের কুমন্ত্রণায় আমাকে পৈতৃক জমি থেকে বঞ্চিত করে এমন নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছেন। ইদানীং মনছুর দিদার নামের এক ভাড়াটে সন্ত্রাসীকে দিয়ে আমাকে গুম- খুনের হুমকি দিচ্ছে। দিদার আমাকে এই বলে হুমকি দেয় যে, স্থানীয় কাউন্সিলর মো: কাজী নূরুল আমীন এবং চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জকে দিয়ে আমার বসতগৃহ থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে উচ্ছেদ করতে পারে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমি ভিটে ভূমি না ছাড়লে আমার পরিণাম ভয়াবহ হবে। এমতাবস্থায় আমি স্বস্ত্রীক জীবনের চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করতেছি। তাই প্রশাসনের নিকট আমার জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।

ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিদার

এখানে উল্লেখ্য, দেলোয়ারকে মনছুরের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিদার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যে হুমকি প্রদান করেছে কল রেকর্ডের মাধ্যমে সেটার সত্যতা পাওয়া গেছে।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে মনছুর বলেন, সংবাদ প্রকাশ করে কোন লাভ হবে না। দেলোয়ারকে ভিটে ভূমি ছাড়তে হবে, এটাই শেষ কথা। তিনি দম্ভ করে বলেন, দেলোয়ারের অভিযোগের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানার এএসআই শাহ আলম আমাকে থানায় ডাকলেও আমি এসবে পাত্তা দিইনি। পুলিশ – সাংবাদিক নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। আমার হাত অনেক উপরে। আমার বিরুদ্ধে কোন সংবাদ প্রকাশ করা হলে কয়েক ডজন মামলা দিবো।

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রবাসে থাকায় তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Check Also

আ.লীগের শেষ ৫ বছরে ১৬ হাজারের বেশি খুন

ঘোষণা ডেস্ক :বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ ও আন্দোলনের পতিত শেখ হাসিনা সরকারের শেষ পাঁচ বছরে দেশে ১৬ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *