
বিশেষ প্রতিনিধি : থানায় উপস্থিত হয়ে জিডি করার বিষয়টি বহুদিন ধরে চলে আসছিল। অনলাইন জিডির মাধ্যমে মানুষজন এখন ঘরে বসে সেবা নিতে পারেন। অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে বসে অনলাইনে জিডির সব কার্যক্রম মানুষজন দেখতে পারবে। এভাবে সরকারি সেবা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনের কিছু দূর্নীতিবাজ ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য জনগণ ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নিজের পকেট ভারী করতে তারা সহজ কাজকে জটিল করে দেখান।
অনলাইন জিডি করতে থানায় যাওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও কতিপয় অসাধু ডিউটি অফিসার অনলাইনের জিডি গ্রহণ না করে ঝুলিয়ে রেখে আবেদনকারীকে থানায় যেতে বাধ্য করেন। আবেদনকারীর পরিচয় নিয়ে পরিস্থিতি বুঝে দাবী করেন চা- নাস্তার টাকা। টাকা না দিলে সার্ভার ডাউন, ওয়াইফাই নেইসহ বিভিন্ন অজুহাতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখে হয়রানি করেন। বিভিন্ন থানায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
এবার সিএমপির চান্দগাঁও থানার সাব ইন্সপেক্টর অসীমের বিরুদ্ধে অনলাইন জিডি গ্রহণে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তিনি যখনই ডিউটিতে থাকেন তখনই অনলাইন জিডি গ্রহণ করতে বিভিন্ন টালবাহানা করে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করেন। গত রবিবার (২০ আগষ্ট) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ডিউটি অফিসারের সরকারি (হোয়্যাটসআ্যাপ) নম্বরে সেতু চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির নম্বরফর্দ ও প্রবেশ পত্র হারানোর একটি অনলাইন জিডির (বিকাল ৩টার দিকে প্রস্তুতকৃত এই জিডির ট্র্যাকিং নং I4RPAS) ড্রাফটের কপি প্রদান করে জিডিটি গ্রহণের অনুরোধ করা হলে তিনি জানান গ্রহণ করা দেওয়া হবে, তবে একটু সময় লাগবে। প্রায় ১ ঘন্টার বেশী সময় জিডিটি রেকর্ড না হওয়ায় রাত ১১টার দিকে এ্যাপ্রোভ করতে আবেদনকারীর পক্ষে তার প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিবেদক নিজেই গেলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় আবেদনকারী ছাড়া গ্রহণ করা হবে না। এসময় তিনি একজন ব্যক্তির মোবাইল হারানোর জিডি প্রস্তুত করতেছিলেন। প্রস্তুতকৃত জিডি গ্রহণে যেখানে তিনি এত গড়িমসি করেন সেখানে মোবাইল হারানো ব্যক্তির জিডি কিসের বিনিময়ে প্রস্তুত করে দিচ্ছেন সেটার ধারণাও স্পষ্ট। একপর্যায়ে অতি প্রয়োজনীয়তার কথা বলে জিডি গ্রহণের বিষয়ে সেকেন্ড অফিসারের দ্বারস্থ হলে তিনি জিডিটি গ্রহণের জন্য এসআই অসীমকে অনুরোধ করেন। তখন অসীম জানায় জিডির ড্রাফট কপিতে আবেদনকারীর স্বাক্ষর নেই, যদিও ড্রাফটের নীচে (বি. দ্র) লাল কালিতে লিখা আছে স্বাক্ষরের কোন প্রয়োজন নেই। এসময় সেকেন্ড অফিসারের রুম থেকে অপারেটর ওঠে এসে বলেন যে, ওসি তদন্ত সাহেব বলেছেন আবেদনকারী না আসলেও জিডি রেকর্ডে সমস্যা নেই, তখন এসআই অসীম দম্ভ করে বলেন তদন্ত স্যার কেন ওসি স্যার এসে বললেও নিবো না। এসময় অফিসার ইনচার্জ মহোদয়কে ফোন করলে তিনি ওয়েটিং এ থাকায় ফোন রিসিভ করেননি।
ডিউটি অফিসার এসআই অসীম নিজের সৃষ্ট নীতিমালা দেখালেও পুলিশের ওয়েব সাইটে সাধারণ ডায়েরি করার বিষয়ে দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়—‘আপনার হারানো ও প্রাপ্তি সংক্রান্ত জান-মালের বিষয়সহ যেকোনও বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। সংশ্লিষ্ট থানা থেকে আপনার অভিযোগের ধরন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আপনাকে অবগত করা হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি জিডির যোগ্য হয়, তাহলে সেটি জিডি নম্বর এবং তদন্ত অফিসারের বিবরণীসহ আপনাকে ডিজিটাল জিডির কপি পাঠানো হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি মামলার যোগ্য (আমলযোগ্য অপরাধ) হয়, সেক্ষেত্রে অভিযোগের প্রিন্ট কপি, অথবা অভিযোগের কোড নম্বরসহ আপনাকে থানায় উপস্থিত থাকতে হবে।’ এই কথায় স্পষ্ট হয় জিডি গ্রহণের জন্য আবেদনকারীকে থানায় যেতে বলা হয়নি।
জানতে চাইলে উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বলেন, অনলাইন জিডির জন্য থানায় যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। নির্ভুলভাবে নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে জিডি প্রস্তুত করার পর থানার ডিউটি অফিসার নিজ থেকে গ্রহণ করবেন। যদি তথ্য -উপাত্তে কোন ভুল থাকে তাহলে আবেদনকারী বা তার কোন প্রতিনিধি সরাসরি থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারের সাথে আলাপ করবেন। চান্দগাঁও থানার এসআই অসীম একটি অনলাইন জিডির আবেদনকারীর পক্ষে প্রতিনিধি যাওয়ায় জিডি গ্রহণ করেননি সেই ব্যাপারে মন্তব্য চাইলে তিনি বলেন, উক্ত অফিসার যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তাহলে ওসিকে অবগত করলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
বর্তমান সরকারের ভিষণ-২০২১ লক্ষ্য ঘোষণায় ২০১০ সালেই সারাদেশে প্রতিটি থানায় ইলেকট্রনিক এফআইআর ও জিডি চালুর পরিকল্পনা করে। দীর্ঘমেয়াদী ১০টি বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক লক্ষ্যের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্য ছিল ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব থানায় ইলেকট্রনিক জিডি ও এফআইআর চালু’ করা।