ঘোষণা ডেস্ক : ভোলার দৌলতখান উপজেলায় হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে মো. শাকিল নামের সাড়ে ৬ বছর বয়সী শিশুকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় শিশু শাকিল উচ্চ আদালতের জামিনে আছেন। জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সাড়ে ছয় বছর বয়সী শিশুকে হামলা ও মারধরের মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু মো. শাকিল বর্তমানে বিদ্যালয়ে যাওয়া পরিবর্তে বাবার কোলে চড়ে ঘুরছে আদালত প্রাঙ্গণ আর উকিলের চেম্বারে।
এমনকি তাকে হাজিরাও দিতে হচ্ছে আদালতে। অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন শিশুর পরিবার ও আইনজীবী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল দৌলতখান উপজেলার দিদারউল্লা গ্রামের আ. মন্নান বাদী হয়ে একই এলাকার মো. শাকিলকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে দৌলতখান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। মামলার অন্য অভিযুক্তরা হচ্ছেন- শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান, চাচা মাহে আলম, দাদা আবদুল খালেক, মা রুনু আকতার ও চাচি নাসিমা বেগম।
অভিযোগে শাকিলের বয়স উল্লেখ করা হয় ২০ বছর। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী শাকিলের বয়স মাত্র ছয় বছর সাত মাস (জন্ম তারিখ ২৩/১১/১৬)। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শাকিলের নেতৃত্বে বাদী ও স্বাক্ষীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত এবং নারীর শ্লীলতাহানী করা হয়েছে। ১২ এপ্রিল আদালত ১ থেকে ৪ নম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে এফআইআর নেওয়ার জন্য দৌলতখান থানাকে নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে গত ১৫ এপ্রিল দৌলতখান থানায় মামলা রুজু হলে ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন আনেন শাকিলসহ অন্য আসামিরা। নিম্ন আদালতে ওই জামিন বলবৎ থাকলেও এ পর্যন্ত ৪ বার হাজিরা দিতে হয়েছে তাদেরকে।
গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বাবা মোখলেছুর রহমানের কোলে চড়ে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসেন সাড়ে ৬ বছরের শিশু মো. শাকিল। সাথে আসেন মা রুনু আকতারও। প্রতিপক্ষের করা মামলার হয়রানি থেকে মুক্ত হতে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে বাবার সাথে আদালতে আসতে হয়েছে শিশু শাকিলকে।
শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, বাদী আবদুল মন্নানের সাথে তাদের প্রায় দুই একর জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তার জমি আত্মসাৎ করার জন্য প্রতিপক্ষ মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জমির ভুয়া কাজপত্র সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ তার শিশু ছেলেকে প্রধান আসামি করে সাজানো মামলায় তার পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। মামলায় যে তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে তখন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঢাকায় চাকরি করা তার ভাই ও ৮৫ বছর বয়সী বাবাকেও আসামি করা করা হয়েছে শুধু হয়রানির জন্য।
শাকিলের মা রুনু আকতার জানান, ছেলে আদালতে আসলে তাকেও সাথে আসতে হয়। অপরিচিত স্থান ও অনেক মানুষজন দেখে ভয় পায় সে। এ কারণে তিনিও সাথে আসেন। এমন ভোগান্তি থেকে তিনি মুক্তি চান।
শাকিলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আদিল মাহামুদ রোম্মান জানান, এ বয়সের একটি শিশুর পক্ষে হামলায় নেতৃত্বে দেওয়া বা কাউকে পিটিয়ে আহত করা সম্ভব না। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে অবৈধভাবে শিশুর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত এ শিশু হামলা বা মারামারি করেনি বলে স্বীকার করে মামলার বাদী আবদুল মন্নান জানান, ভুলবশত এজাহারে এ শিশুর নাম এসেছে। শাকিলের বড় ভাইয়ের নামের পরিবর্তে তার নাম লেখা হয়েছে।
মামলার ৬ নম্বর স্বাক্ষী ও বাদীর ভাই মো. রুহুল আমিন জানান, তাদের বিরুদ্ধে শাকিলের বাবা একটি মামলা করেছিলেন, এটা তার কাউন্টার মামলা।
দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্য রঞ্জন খাশকেল জানান, মামলাটি আদালত থেকে এসেছে। সেখানে শাকিলের বয়স ২০ বছর দেখানো হয়েছে। কোর্টের আদেশে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে এসআই মো. মনির তদন্ত করছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়েও শাকিলকে শিশু হিসেবে দেখেছেন। এসময় বাদীপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, মূলত শকিলের ২০ বছর বয়সী বড় ভাই আছে। তার নামের স্থলে শাকিলের নাম ভুলে চলে এসেছে। এখন তদন্ত শেষে বলা যাবে কে জড়িত আছে কে নেই।
ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, আদালতের আদেশে থানায় মামলাটি হয়েছে। মামলার তদন্তকাজ অনেকটাই শেষ। সরেজমিনে যাচাই বাছাই করে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করবে। শিশুটি যেন আইনি সুযোগ সুবিধা পান সেই লক্ষ্যেই পুলিশ কাজ করছে।
মামলার বাদী ও শিশু শাকিলের পরিবার পরস্পর আত্মীয়। এদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিভিন্ন আদালতে ৪টি মামলা রয়েছে। শাকিল চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট।