
ঘোষণা ডেস্ক : দুই শিশুকে নিজের জিম্মায় রাখতে বাবা ইমরান শরিফের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এর ফলে দুই শিশু তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছেই থাকবে।
ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এবং পারিবারিক আপিল আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া রোববার (১৬ জুলাই) এ আদেশ দেন।
আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নাসিমা আক্তার। আর নাকানো এরিকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
জজ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইমরান শরীফের আইনজীবী।
দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন বাবা ইমরান শরীফ। গত ২৯ জানুয়ারি সেই মামলা খারিজ করে দিয়ে দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার সিদ্ধান্ত দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান।
নাবালিকা দুই শিশু কার কাছে থাকলে কল্যাণ হবে, সেই বিবেচনা থেকে বিচারক ওই রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, “জাপানে বেড়ে ওঠা দুই শিশুর প্রাথমিক শুশ্রূষাকারী তাদের মা নাকানো এরিকো। অথচ তাকে কিছু না জানিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া হঠাৎ অন্য একটি দেশে নিয়ে আসাটা মাতৃত্বের বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন রূপটিকে অসম্মান করার নামান্তর।”
রায়ে আদালত আরও বলে, “বাবা হিসাবে ইমরান শরীফ নাবালিকা দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার পূর্ণ হকদার। তবে জাপানি মায়ের কাছে দুই নাবালিকার হেফাজত তাদের শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক, তথা সার্বিক মঙ্গলজনক হবে বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।”
ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার জেলা জজ আদালতে এই আপিল করেন শিশুদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরিফ। রোববার তা খারিজ হয়ে গেল।
ইমরান শরীফ পেশায় একজন প্রকৌশলী। জাপানে অবস্থানকালে ২০০৮ সালে চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। টোকিওতে এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন মেয়ের বাবা-মা হন।
দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি বিচ্ছেদের আবেদন করেন নাকানো। এরপর স্কুলবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান বলে নাকানোর ভাষ্য।
ওই বছর ২৮ জানুয়ারি সন্তানদের জিম্মা চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন নাকানো। আর ইমরান ২১ ফেব্রুয়ারি বড় ও মেজ মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে থেকে যায় জাপানে।
মেয়েদের ফিরে পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন নাকানো। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন মা নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন।
পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।
এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে।
২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।