ঘোষণা ডেস্ক : বিএনপির সঙ্গে দূরত্বের কথা প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আনার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী দাবি করল, আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তাদের কোনো সমঝোতা হয়নি।
জামায়াত জানিয়েছে, তাদের আমিরের গ্রেপ্তারে বিএনপি নিশ্চুপ থাকায় তাদের কর্মীরা ‘আহত’ হয়েছেন। এ কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকলেও তারা বিএনপির ‘পথে নেই’।
তবে ভবিষ্যতে তাদের পথ আবার মিলতে পারে, সে আভাসও দিয়ে রেখেছে দুই দশক ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকা দলটি।
শনিবার(১৫ জুলাই) ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাদের বর্তমান অবস্থান প্রকাশ করেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াত ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হলেও কয়েক বছর ধরে তাদের সম্পর্ক আগের মতো নেই।
২০২২ সালে কুমিল্লায় একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট আর নেই। তবে তারা যুগপৎ আন্দোলনে আছেন।
জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে কিছু স্বীকার করা হয়নি। তবে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে করা সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এরপর বিএনপি যখন যুগপৎ কর্মসূচি গ্রহণ করে, তাতেও জামায়াত থাকে অনুপস্থিত। দলের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে কর্মসূচি নেওয়ায় তারা বিএনপির সঙ্গে মাঠে নামছেন না।
তবে গত ২ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দাবি করেন, জামায়াত তাদের সঙ্গেই আন্দোলনে আছে।
সেদিন তিনি বলেন, “সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
একসঙ্গে নির্বাচনও করেছি, একসঙ্গে সরকারেও ছিলাম এবং যুগপতে আমরা ১০ দফা ঘোষণা করেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম তারা (বিএনপি) অন্তত আমাদের আমিরের গ্রেপ্তারের পরে একটা বিবৃতি দেবে, পুলিশি হামলার পরে একটা বিবৃতি দেবে। আমি জানি, তারা সেই কাজটি করেননি। আমাদের কর্মীরা আহত হয়েছেন।”
২০২২ সালের গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিটিসি। পরের দিন যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে ৯ নভেম্বর শফিকুরের ছেলে রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে সিটিটিসি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন, তা জানতেন শফিকুর। এরপরও তিনি নীরব ছিলেন।
তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করে বলা হয়, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে দলের আমির কিংবা কারও কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত নেতারা।