শিরোনাম
Home / অপরাধ / চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে দোকান এবং ভাড়া বাসায় হামলা-লুটপাট
এই দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়

চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে দোকান এবং ভাড়া বাসায় হামলা-লুটপাট

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে দোকান এবং ভাড়া বাসায় হামলা চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৫ জুলাই) এক কিলোমিটার মুহুরী বাড়ীতে অবসরপ্রাপ্ত দুদক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর ভাড়াটিয়া ফারুকের মুদি দোকানে এবং কলোনীর ভাড়াটিয়া ইউসুফের সাথে এই ঘটনা ঘটে।

বাড়া বাসায় লুটপাটের পর হামলাকারীরা তালা লাগিয়ে দেয়

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বুধবার দুপুর আনুমানিক ১২ টার দিকে অত্র এলাকার জসীম, শামীম, শাহীন, আইরিন, জসীমের ৪ মেয়েসহ প্রায় ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামা লোক লাঠিসোটা নিয়ে প্রথমে ফারুকের মুদি দোকানে হামলা চালায়। এসময় দোকানে ছিলো ফারুকের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা এবং ১০ বছরের শিশু সন্তান নাদিম। হামলাকারীরা সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে দোকানে ঢুকে লুটপাট চালিয়ে নগদ টাকা ও দামী মালামালসহ আনুমানিক ৪৫ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। এরপরে দোকানের পেছনের কলোনীতে ভাড়াটিয়া ইউসুফের বাসায় ঢুকে সব আসবাবপত্র বের করে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয় এবং হামলাকারীরা কিছু দামী আসবাবপত্র নিয়ে যায়। এসময় হামলাকারীরা এতই উশৃংখল ছিলো যে, তাদেরকে বাঁধা দেওয়ার মতো সাহস কোন এলাকাবাসীর ছিলো না।

ঘটনার পরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে হামলাকারীরা প্রতিবেদকসহ বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীর সাথেও উশৃংখল আচরণ করেন। এসময় তারা বলেন যতক্ষণ জমির অংশ কিংবা নগদ টাকা পাবে না ততদিন শহীদুল্লাহর কোন ভাড়াটিয়াকে থাকতে দেওয়া হবে না।

সংবাদ সংগ্রহের সময় কয়েকজন হামলাকারী উশৃংখল হয়ে উঠেন।

জানা যায়, দুদকের সাবেক সিনিয়র উপ পরিচালক ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর শ্বশুর আব্দুল মতিন ১৯৫২ সালে ১০ গন্ডা জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে উক্ত জমি উনার মেয়ে ফৌজিয়া আনোয়ারের নামে হেবা করেন। হেবা গ্রহীতা ফৌজিয়া আনোয়ারের নামে বিএস নামজারী খতিয়ানও সৃজিত হয়। উক্ত জমি নিয়ে আফাজ উল্লাহর ওয়ারিশ অর্থাৎ আব্দুল মতিনকে কবলাদাতা পক্ষের সিরাজুল হক একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলা ২০০৯ সালে সোলেনামামূলে খারিজ হয়। পরবর্তীতে সিরাজুল হকের ভাই ফিরোজ বক্সের ওয়ারিশ অর্থাৎ জসীম গং আর.এস মূলে জমির একটি অংশ দাবি করে। তাদের কাছে বি.এস খতিয়ান বা অন্য কোন দলিল নেই। তাদের দাবী নিয়ে ২০০৬ সালে ৪৭/২৬১ নং খতিয়ানের (১৬৮৭, ১৬৮৮, ১৬৮৯, ১৬৯০) নং দাগ ব্যবহার করে ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বাদী নিজেদের পক্ষে কোন উপযুক্ত দলিল দাখিল করতে না পারায় ২০১৩ সালে উক্ত মামলা খারিজ হয়। ২০২৩ সালে একই খতিয়ানের শুধু দাগ পরিবর্তন করে অর্থাৎ (১৬৮৯, ১৬৯০, ১৭৫৭, ১৭৫৮, ১৭৫৯) নং দাগ ব্যবহার করে একই দাবী নিয়ে উক্ত আদালতে পুনরায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন, যার নং ১৫৩/২৩। ফৌজিয়া আনোয়ারের জমির সামনের অংশে ৫টি টিনশেড ভাড়া বাসা এবং একটি দ্বিতল বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। এসব স্থাপনা নির্মাণে বাঁধা দেওয়ায় জসীম, শাহীন, রিপাত এবং আশিকের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ২১/০২/২০২৩ ইং তারিখের সাধারণ ডায়েরি নং ১৫৩০। উক্ত ডায়েরি নন জিআর মামলা হিসেবে এখন বিচারাধীন।

দোকানে ভাংচুরের একাংশ

মুদি দোকানী ফারুক বলেন, আমি আগে গাড়ী চালাতাম। এখন অসুস্থতার কারণে গাড়ী চালাতে পারি না। প্রায় দেড় বছর যাবত এই ছোট দোকান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়ে কোনরকমে সংসার চলে। হামলার সময় আমি দোকানে ছিলাম না, আমার স্ত্রী এবং ১০ বছরের ছেলে আদম ছিলো। হামলাকারীরা আমার দোকানে লুটপাট করার সময় আমার স্ত্রী এবং শিশু সন্তানকেও মারধর করে। ফারুক প্রশ্ন রেখে বলেন তাদের সাথে বিরোধ থাকলে আমার মালিকের সাথে, কিন্তু আমার দোকানে কেন হামলা- লুটপাট হলো? দোকান থেকে নগদে এবং মালামাল মিলে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা লুট হয়েছে আমি সেটার ক্ষতিপূরণ চাই।

ভাড়াটিয়া ইউসুফের স্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে একদল পুরুষ -মহিলা লাঠিসোটা নিয়ে এসে আমার বাসায় ঢুকে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বাসার সব মালামাল খালি করে বাসায় তালা লাগিয়ে দেয়। আমার অনেক জিনিসপত্র তারা লুট করে নিয়ে যায়, আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন স্থানীয় এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করে বলেন, শহীদুল্লাহ একজন ভালো মানুষ। তিনি কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করেন না। তার স্ত্রীর পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি নিয়ে জসীমদের সাথে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলতেছে। বিরোধ থেকে তার ভাড়া বাসা এবং দোকানে হামলা। তারা আদালতে মামলা দায়ের করেছে, আদালতের রায়ে যা হওয়ার হবে। গরীব দোকানদার এবং ভাড়াটিয়াদের উপর হামলার কোন যৌক্তিকতা নেই।

এই ব্যাপারে ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, জসীম গং খুবই উশৃংখল প্রকৃতির লোক । তাদের জনবল বেশি হওয়ায় আমার উপর অনেকটা জুলুম করতেছে। আমি মনে করি এটা একটা সংঘবদ্ধ চক্র। আমার কাছে দীর্ঘদিন যাবত ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। তাদের দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে অহেতুক মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করে। আমার স্ত্রীর জমিতে তাদের অংশ রয়েছে মর্মে দাবি করে ২০০৬ সালে ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। ২০১৩ সালে উক্ত মামলা খারিজ হয়। সম্প্রতি খতিয়ানের দাগ পরিবর্তন করে একই আদালতে একই দাবী নিয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মূলত আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এসব মামলা- হামলা। আমি তাদের চাঁদাবাজির বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। তিনি খুবই সাধারণ জীবন যাপন করেন উল্লেখে জানান, আমি দুদকের একজন সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হলেও এই পরিচয় কারো কাছে ব্যবহারও করি না। সম্প্রতি টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমার স্ত্রীর উক্ত ১০ গন্ডা জমি থেকে একটি অংশ বিক্রি করি। জমি বিক্রির সাথে সাথে জসীম গং আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি তাদেরকে টাকা না দিলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আমার ভাড়াঘর এবং দোকানে এই হামলা ও লুটপাট চালায়। এই চক্রের অনেক সদস্য আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট করে, এসবের বিরুদ্ধে আমি তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করবো।

ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩ জনকে আটক করে। এসময় উভয় পক্ষ মারমুখী অবস্থানে ছিলো।পরে আটককৃতদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করার ঘটনায় আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদেরকে আটক করা হয়। দোকানে ভাংচুরের অভিযোগ তিনি পাননি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Check Also

ডেঙ্গু-কিডনি রোগীদের জন্য পৃথক সেন্টার চালু করতে চাই: চসিক মেয়র

এম.জিয়াউল হক: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে একটি অত্যাধুনিক ডায়ালাইসিস সেন্টার ও ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *