অপরাধ ঘোষণা :লোডশেডিংয়ে মানুষের কষ্ট হচ্ছে—তা স্বীকার করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে। ১৫ দিন পর আর কষ্ট থাকবে না।’
বুধবার(৭ জুন) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্র হবে, তা আমরা ভাবতে পারি না। আর বৃষ্টি নাই। সেখানেও আরেকটা কষ্ট। এ কষ্টটা সবার হচ্ছে। তা আমরা জানি। তারপরও আমরা বারবার বসে এ কষ্টটা লাঘব করার চেষ্টা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারলেও দুর্ভাগ্য একদিকে করোনাভাইরাসের তিনটা বছর। সবকিছুর চলাচল বন্ধ। অর্থনীতির চালিকা স্থবির। উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এরপর আসল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর নিষেধাজ্ঞা পাল্টা-নিষেধাজ্ঞায় প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়ে গেল। প্রতিটি জিনিসের দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে সেটা কেনা, আনা, পরিবহন করা। আবার এ জাহাজে আসল কেন? সেটা আসতে দেবে না, ভিড়তে দেবে না। খালি দেশের ওপর না, জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে থাকল আমেরিকা। যার ফলে প্রত্যেকটা দেশে মুদ্রাস্ফীতি।’
বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা জ্ঞানী-গুণী আছেন, বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে যাহারা—বুদ্ধিজীবী। অনেক পড়াশোনা জানে, এটা ঠিক। অনেক কিতাব পড়ে। ওই কিতাবই পড়েছে। আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তাঁরা বক্তৃতা করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেটার সুযোগ নেয়। প্রাইভেট টেলিভিশন আওয়ামী লীগ দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে টক শো করে বলে এই বাজেট আওয়ামী লীগ কোনো দিনই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট করতে চাই, কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারব—এটা জেনেই বাজেট দিয়েছি।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কত ভোট পড়েছিল? ২-৩ শতাংশ ভোট পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দেওয়া হলো সব ভোট নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণ তাঁদের ভোটের অধিকার নিয়ে এখন সচেতন। সেই সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই এই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল, আন্দোলন করেছিল। এর ফলে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। এই কথাটা সকলের মনে রাখা উচিত।’
২০০১ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সব সময় জয়ী হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনো দিন পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটেই এসেছে। এর বাইরে কখনো ক্ষমতা দখল করে নাই। আজকে তারা বলে ভোটার বিহীন। কে ভোটার বিহীন? ভোটার বিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান। ভোটার বিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে? তারা তো ভোটার বিহীন হিসেবেই ক্ষমতা দখল করেছে। খালেদা জিয়াকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে এই দেশের জনগণ।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু লোক আছে সুযোগটা নেয়, মজুত করে রাখে। পেঁয়াজ উৎপাদন যখন করেছি, তখন দাম হু হু করে বেড়ে গেল। আমদানি করার কারণে ওমনিই দাম কমে গেছে। মজুতদারেরা অপকর্ম না করলে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই আমাদের হতো। আমারও জানি কখন কোন জবাবটা দিতে হয়, কখন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে গিয়ে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।