ঘোষণা ডেস্ক : বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ আকবর হোসেন খান পাঠান দুলু ওরফে ফারুক।
মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত সাড়ে ৯টায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের সোম টওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে ওই মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে শায়িত করা হয়।
এ সময় রাজনৈতিক ব্যক্তি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র অঙ্গনের ব্যক্তি, সাংবাদিক, ফারুকের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, জীবিত অবস্থায় চিত্রনায়ক ফারুক অসিয়ত করে গেছেন, যেন মৃত্যুর পর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবা আজগর হোসেন পাঠানের কবরের পাশে দাফন করা হয়। সেই কথা অনুযায়ী তাকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার পাশে কবর দেওয়া হয়েছে।
চিত্রনায়ক ফারুক সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ফারজানা পাঠান, কন্যা ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও পুত্র রওশন হোসেন শরৎ পাঠান, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান দুলু ওরফে ফারুকের পৈতৃক ভিটায় তার মরদেহ আনা হয়। সেখানে এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন কবেন। পরে রাত ৯টায় সোম টিওরী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে রাত নয়টায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান। পরীক্ষায় রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করছিলেন তিনি।
নায়ক ফারুক ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমায় তার যাত্রা শুরু হয়। প্রথম সিনেমায় তিনি কবরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। এরপর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ দুটি সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক।
৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করা নায়ক ফারুক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নায়ক ফারুক অভিনয়ে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে ভূষিত হয়েছেন আজীবন সম্মাননায়।
নায়ক ফারুক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে সারেং বৌ, লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমনি, মিয়া ভাই, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে ইত্যাদি।