নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামে ৪ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। কিশোরী সামিরা ও নসমিন থাকে উখিয়া বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ১৫ ও ১৭ বছর বয়সী দুই কিশোরী ক্যাম্পে থাকলেও দু’জনেই বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করেছে বরিশালের ঠিকানায়। আর পাসপোর্ট তৈরি করেছে ঢাকার আশুলিয়ার ঠিকানায়।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের পারিবারিক প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী দু’জনের বয়স ১৫ ও ১৭ বছর হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের বয়স অনেক বাড়িয়ে পাসপোর্টে দেখানো হয়েছে ২৬ বছরের তরুণী হিসাবে।
সৌদি আরবে পাড়ি জমাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে তারা ভিসা এবং এমিরেটস এয়ারলাইন্সের টিকিটও সংগ্রহ করে। কিন্তু যাবার পথে ২ কিশোরী আটক হয় নগরীর আকবরশাহ থানা পুলিশের হাতে। তাদের সাথে আটক করা হয় আরো ২ জনকে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে ২ কিশোরী বরিশালের ঠিকানায় এনআইডি নিয়ে ঢাকার ঠিকানায় কিভাবে পাসপোর্ট তৈরি করলো তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে আটকরা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসেই দালালের মাধ্যমে তারা এনআইডি, পাসপোর্ট, ভিসা সবকিছু তৈরি করেছে। এজন্য দালালদের চাহিদা অনুযায়ী টাকাও দেয়া হয়েছে।
গত ২১ এপ্রিল বেলা একটায় নগরীর সিটি গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসায় আকবরশাহ থানা পুলিশ। তল্লাশির সময় দেখা যায় একজন পুরুষ, দুইজন কিশোরী ও একজন মহিলার কাছে বাসের টিকিট নেই। সন্দেহ হলে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা নিজেদেরকে রোহিঙ্গা শরণার্থী বলে জানায়। কিন্তু তাদের কাছে বাংলাদেশী এনআইডি, পাসপোর্ট, সৌদিআরবে যাবার ভিসা ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সের টিকিট পাওয়া যায়। পুলিশের হাতে আটক ৪জন হলেন উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ১৫ নম্বর ব্লকের জাফর আহমদের মেয়ে সামিরা আক্তার (১৬), চানমিয়ার মেয়ে তাসমিন আক্তার (১৬), সামিরার ভাই মো. এরশাদ (২৩) ও কক্সবাজার সদরের হেফজুর রহমানের স্ত্রী দিলদার বেগম (৩৫)। তবে এনআইডিতে দিলদার বেগমের ঠিকানা নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ও. আর. নিজাম রোডের ২৯ নম্বর হোল্ডিং।
এনআইডি বরিশালে, পাসপোর্ট ঢাকায় :
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে তারা বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে। ঠিকানা হয় উখিয়া বালিখালি ক্যাম্পের ১৫ নম্বর ব্লকে। শরণার্থী ক্যাম্পে বসেই দালালের মাধ্যমে দুই কিশোরী বরিশালের ভুতেরদিয়া বাবুগঞ্জের ঠিকানায় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর এনআইডি তৈরি করে। রহস্যের বিষয় দুই কিশোরী পাসপোর্ট তৈরি করে ঢাকার আশুলিয়ার বয়ানবাড়ির ঠিকানায়। কিন্ত কখনো তারা সেখানে যায়নি। পাসপোর্ট ও এনআইডিতে কিশোরী সামিরার জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে ১৯৯৭ সালের ৬ মার্চ ও তাসমিনের ১৯৯৭ সালের ২ মার্চ। হিসাব অনুযায়ী দুই জনের বয়স ২৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের পরিবারিক প্রত্যয়নপত্রের তথ্য অনুযায়ী, তাসমিন আরার আসল নাম নসমিন আরা। পিতার নাম আবদু রশিদ। এনআইডিতে নিজের নাম ও পিতার নাম দুটিই পরিবর্তন করা হয়েছে। দুই বোন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে নসমিন দ্বিতীয়।
সামিরা ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি ও তাসমিন ওরফে নসমিন আরা ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করে। প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী সামিরার বয়স ১৫ ও নসমিনের বয়স ১৭।
জানতে চাইলে আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, আটক রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানিয়েছে দালালের মাধ্যমে তারা এনআইডি, পাসপোর্ট তৈরি করেছে। তাদের কাছে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের টিকিটও ছিল। বরিশালের ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করা হলেও পাসপোর্ট তৈরি করেছে ঢাকার আশুলিয়ার ঠিকানায়। জন্মসাল কমিয়ে দুই কিশোরীকে ২৬ বছরের তরুণী দেখানো হয়েছে। বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।