নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে ২ জন নিহতের ঘটনায় জাতীয় শ্রমিক লীগের নেতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৮ মে (সোমবার) ঘটনার পর রাতেই গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. ইলিয়াছ হোসেন মিঠু (৪৫), আব্দুর রহিম (পূর্বের নাম কার্তিক বনিক) (২৯), বিপ্লব মল্লিক (২৮), রবিউল ইসলাম (২০), রায়হান উদ্দিন (১৯), মো. শামীম (২৮), সাগর দাশ (২০) ও ১৬ বছরের এক কিশোর। এর মধ্যে ইলিয়াছ হোসেন জাতীয় শ্রমিক লীগের চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ঘটনার পর কক্সবাজার পালিয়ে যাওয়ার সময় পথে চকরিয়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। বাকিরা এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুস্তাফিজুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত সোমবার রাত ৮টার দিকে পাহাড়তলী জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গেটের সামনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মারামারির পর ছুরিকাঘাতের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মাসুম (৩০) ও সজিব (২০) নামে ছুরিকাঘাতে আহত দুজনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, নারীসংক্রান্ত বিষয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক চলাকালে এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এর আগে সাগরিকা মোড়ে শ্রমিক লীগ নেতা মো. ইলিয়াছ হোসেন তাঁর অফিসে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কথা বলে সবাইকে ডেকে আনেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘ঘটনার মূল হোতা ছিলেন মো. ইলিয়াছ হোসেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকা বিটাক মোড়ে একটি অফিস আছে। সেখানে বসে দুই কিশোর গ্রুপকে পরিচালনা করত। দুই গ্রুপের মধ্যে মেয়েঘটিত বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলে তিনি উভয় গ্রুপকে তাঁর অফিসে ডেকে আনেন। এ সময় বৈঠকে তর্কাতর্কি শুরু হলে সে নিজেই শালাদের ধরে মার বলার সঙ্গে সঙ্গে ফয়সাল, বাবু, বিপ্লব, কার্তিকসহ আরো ১০/১৫ জন মাসুম, সজিবসহ কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহত করেন।’
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুস্তাফিজুর বলেন, ‘এই খুনের ঘটনায় আজ নিহত মাসুমের ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে ১৮ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পরে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। এদের মধ্যে রবিউল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর ৬ আসামিকে আদালতে পাঁচ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ৭জনই মামলার এজাহারনামীয় আসামি। বাকি ১জন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর।’
ওসি আরো বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম শিহাবের সঙ্গে তাঁর পরিচিত রবিউল ইসলামের কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে বিটাক মোড়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ বিষয় নিয়ে রাতে ৮টার দিকে নিজেদের মধ্যে মীমাংসার জন্য বিটাক গলিতে আসে। এ সময় দাঁড়িয়ে কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ করে পেছন থেকে কয়েকজন মাসুম ও সজীবকে ছুরিকাঘাত করে।’ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।