আকবরশাহে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন গরুর খামার গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড় কাটার অভিযোগে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গরুর খামারের জন্য নির্মাণাধীন স্থাপনা দেয়াল ও কাঠামো ভেঙে দেয় জেলা প্রশাসন। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক।
অভিযানের খবর পেয়ে জহুরুল আলম জসিম ঘটনাস্থলে যান। তবে তিনি অভিযানে বাধা দেননি বলে জানা গেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, উত্তর পাহাড়তলী মৌজায় এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির পেছনে পাহাড় কেটে গরুর খামার নির্মাণ করা হচ্ছে। গোড়ার কিছু অংশ কেটে ফেলায় পাহাড়টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বলে আমরা তথ্য পাই। এর ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আমরা ওই স্থাপনার দেয়াল ও স্ট্রাকচার ভেঙে দিই। খামার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
অভিযানের সময় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম সেখানে গিয়ে তিনি ওই গরুর খামারটি নির্মাণ করার কথা জানান বলে তথ্য দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক।
জহুরুল আলম জসিম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
পাহাড় কাটার অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, ‘পাহাড় কেটে আমি গরুর খামার করিনি। এখানে কোনো পাহাড়ই নেই। এটা আমার নিজের জায়গা। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসেছিলেন ছড়াখালের মাপ নেওয়ার জন্য।’
২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আকবর শাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। এরপর গত ২৬ জানুয়ারি উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে হামলার অভিযোগ আছে এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।
গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে ১ জন নিহত ও ৪জন আহত হন। ১১ এপ্রিল সেই পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন প্রকৌশলীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদফতর।
‘অগ্রণী ব্যংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি’র প্রায় ১১ একর আয়তনের পাহাড়টি কেটে সড়ক নির্মাণ করছিল সিটি করপোরেশন। আর এ কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন কাউন্সিলর জসিম। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা না মেনে চসিক তাদের কাজ অব্যাহত রাখার একপর্যায়ে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।