শিরোনাম
Home / লাইফস্টাইল / ঘুমের আগে কম আলো কমাবে গর্ভকালের ডায়বেটিস ঝুঁকি

ঘুমের আগে কম আলো কমাবে গর্ভকালের ডায়বেটিস ঝুঁকি

ঘুমের আগে কিছু সময় বই পড়া কিংবা চাদরের নিচে শুয়ে মোবাইলে নজর বুলানো এখন অনেকেরই অভ্যাস। তবে গর্ভবতী নারীদের ঘুমানোর আগে বেশি আলোতে না থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য গবেষকরা।

রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকলজিস্টের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি একশ গর্ভবতী নারীর মধ্যে চার থেকে পাঁচ জন এসময় ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। যদি সময়মত নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়তেও পারে। মায়ের সঙ্গে সন্তানেরও শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়ারও ঝুঁকি থাকে।

আমেরিকান জার্নাল অফ অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকলোজি ম্যাটারনাল ফ্যাটাল মেডিসিনের বরাতে এসব তথ্য জানাচ্ছে সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের আগের তিন ঘণ্টা যদি বেশি আলোর মধ্যে থাকা হয়, তাহলে গর্ভকালে নারীর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

এ গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মিনজি কিম বলেন, “গর্ভকালে ভয়াবহ জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে রাতে আলোতে থাকা, যদিও এটা হয়ত অনেকেরই জানা নেই।”

এর আগে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কর্মজীবনে শিফটভিত্তিক কাজ করেন, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

আবার বাইরে রাতের কৃত্রিম আলোতে দীর্ঘসময় কাটালেও এ ঝুঁকি বেড়ে যায়।

গবেষকদের ধারণা, রাতে কৃত্রিম আলোতে থাকলে শরীরে মেলাটোনিন হরমোন কমতে থাকে। এতে শরীরের নিয়মে ব্যাঘাত ঘটে। বিপাক প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে না।

কিম বলেন, “আমরা এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা থেকে কিছু প্রমাণ করতে না পারলেও এমন চলতে থাকলে গর্ভবতী নারীর শরীরে তার প্রভাব পড়তে পারে।”

২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে কিম ও তার সহকর্মীরা মিলে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪১ জন গর্ভবতী নারীর সঙ্গে কথা বলেন। এই নারীদের তখন প্রথম তিন মাস শেষে দ্বিতীয় তিন মাসের গর্ভকাল চলছিল।

তাদের কবজিতে লাইট সেন্সর পরিয়ে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের জন্য তাদের প্রতিদিনের ঘুমের ডায়েরি মেনে চলতে বলা হয়।

ঘুমের আগে তিন ঘণ্টা মাঝারি আলোতে থাকার ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা জরিপে অংশ নেওয়ার নারীদের তিনটি দলে ভাগ করেন।

ফলাফলে দেয়া যায়, ২৪৭ জনের মধ্যে ১৬ জন মাতৃত্বকালীর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা প্রতিদিন ঘুমের আগে এক ঘণ্টা ৪২ মিনিট অল্প আলোতে কাটিয়েছিল।

অন্যদিকে দুই ঘণ্টা ১২ মিনিট অল্প আলোতে কাটিয়েছিলেন ১২ জন নারী এবং এদের মধ্যে তিন জন দুই ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ছিলেন অল্প আলোর সংস্পর্শে।

এই জরিপে অল্প সংখ্যক নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

ফলাফল নিয়ে কিম বলেন,”নারীদের মধ্যে যারা আবছা আলোর সংস্পর্শে সবচেয়ে কম সময় কাটিয়েছেন, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা একই রকম আলোতে বেশি সময় কাটানোদের থেকে পাঁচ গুণ বেশি ছিল।”

গবেষকরা জানান, তাদের সঙ্গে একটি সংস্থার কর্মীরাও এ কাজে ছিলেন। জরিপে অংশ নেওয়া নারীদের বয়স, ঘুমের মান ও পরিমাণ, বডি মাস ইনডেস্ক এবং কে কতক্ষণ কতটুকু আলোতে থাকলেন, সেই হিসাব টুকে নিচ্ছিলেন তারা।

এ গবেষণার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়েছেন গবেষকরা। যেমন, শুধুমাত্র এক সপ্তাহ আলোতে থাকার তথ্য পর্যবেক্ষণে নেওয়া হয়েছে, এটাকে তারা সীমাবদ্ধতা হিসেবে মানছেন।

কিম বলেন, “ভালো বিষয় যেটা বোঝা গেছে, সেটা হল, এই বিপদ এড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়াটা তুলনামূলকভাবে সহজ।

”ফোনের মত যন্ত্র, যা থেকে আলোর বিচ্ছুরণ হয়, সেসবও এর আওতায় পড়ছে। এসব থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিৎ। অন্তত ডিভাইসের স্ক্রিন আবছা করে দেওয়া যায় অথবা নাইট মুডে রাখা যায়।”

ডায়বেটিস ইউকের রিসার্চ কমিউনিকেশন ম্যানেজার ফায়ে রিলে বলেন, “এই গবেষণা থেকে ঘুমের আগে কৃত্রিম আলোতে থাকা এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

”তবে কৃত্রিম আলোর পরিমাণ কমিয়ে দিলে এই ঝুঁকি রোধ করা যাবে– এমন কথা ‍দৃঢ়তার সঙ্গে বলার আগে আমাদের আরও অনেক কিছু জানা দরকার।”

”এখন আমাদের জানা আছে গর্ভকালে আগে ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ভাবে সক্রিয় থাকা গর্ভকালে ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।”

Check Also

বিবাহিত পুরুষরা কেন অন্যের স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হন

বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত পুরুষদের মধ্যে অনেকেই গোপনে অন্যের স্ত্রীতে আকৃষ্ট হন। একজন বিবাহিত পুরুষ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *