শিরোনাম
Home / রাজনীতি / নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে চিরনিদ্রায় শায়িত জাফরুল্লাহ চৌধুরী

নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে চিরনিদ্রায় শায়িত জাফরুল্লাহ চৌধুরী

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। হাজারো কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীর অশ্রু জলে শেষ বিদায় নিলেন দেশের এই কিংবদন্তি।

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইসএ মাঠে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পঞ্চম এবং শেষ জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর বিকেল ৩টায় নিজ হাতে গড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সূচনা ভবনের সামনে তাকে দাফন করা হয়।

জানাজা ও দাফনে রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

স্বাধীন দেশে এক নতুন যুদ্ধে নেমেছিলেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ। গড়ে তুলেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ঢাকার বাইরের নিভৃত এক গ্রামে আস্তানা করেছিলেন। এক উজ্জ্বল বাতি হয়ে সেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আলো ছড়িয়েছে সারা দেশে। অহর্নিশ কাজে কিংবা প্রাণ জুড়াতে যেখানে জাফরুল্লাহ নিয়মিত এসেছেন। সেখানে আবারও ফিরলেন জাফরুল্লাহ। তবে নিথর, প্রাণহীন। আগে যেখানে ফিরলে তার প্রাণস্পন্দনে উচ্ছ্বাস ছড়াতো। সেই প্রিয় মাটিতে জাফরুল্লাহর আগমনে সবার মধ্যে শোকের ছায়া। প্রিয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জাফরুল্লাহ শায়িত হলেন চিরনিদ্রায়। এখানেই থাকবে তার নিস্পন্দ শরীর।

পরিবারের ইচ্ছা মেনেই তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হয়েছে। যদিও জাফরুল্লাহর চাওয়া ছিল, তার মরদেহ দেওয়া হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার কাজে। কিন্তু এমন মহাপ্রাণের শরীরে ছুরিকাঁচি বসাতে রাজি হননি চিকিৎসকরা। অগত্যা তাকে আনা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসে জাফরুল্লাহর মরদেহ।

তারও আগে থেকেই শ্রদ্ধা জানাতে আগতরা ভিড় করেন গণস্বাস্থ্য প্রাঙ্গণে। সবার চোখে মুখে শোকের ছায়া। অ্যাপ্রোন গায়ে হবু ডাক্তাররা এসেছেন। জড়ো হয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণবিশ্ববিদ্যালয়সহ জাফরুল্লাহর অনুরাগী স্থানীয় বাসিন্দারাও। ৫০ বছরের সম্পর্ক বলে কথা!

ফিসফাস করে অনেকেই নিজেদের স্মৃতিচারণ করছেন। কেউ কেউ স্মরণ করছেন জাফরুল্লাহকে দেখার কথা। তার সঙ্গে সৃষ্টি হওয়া স্মৃতি। সেখানে শত শত অনুরাগীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন তার জানাজায়।

শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে জাফরুল্লাহর মরদেহ নেওয়া হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে কবরের জন্য নির্ধারিত স্থানে। পরিবার, সহকর্মী, অনুরাগীদের উপস্থিতিতে সেখানেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাটিতে শায়িত করা হয় তাকে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফ্রিজিং ভ্যানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ পৌঁছে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে মরদেহ সকলের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয়। জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিক চৌধুরী বলেন, আমার মরহুম বাবার সঙ্গে কারও কোনো লেনদেন যদি থেকে থাকে কিংবা কেউ কিছু পেয়ে থাকলে তারা যেন আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তিনি বলেন, আমার বাবা মেডিকেল সায়েন্সের কল্যাণে দেহ দান করে যেতে চেয়েছিলেন। আমরা বাবার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেছিলাম। আমরা প্রতিষ্ঠিত দুটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তারা বাবাকে অনেক শ্রদ্ধা করেন। তারা বলেছেন আমার বাবার শরীরে কেউ ছুরি চালাতে পারবে না। শ্রদ্ধার জায়গা থেকে তারা বলেছেন। এমন সময়ও আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়েছি।

এর আগে ধানমন্ডির বাসভবনে প্রথম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দ্বিতীয়, শহীদ মিনারে তৃতীয় ও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত সমস্যার কারণে চিকিৎসাধীন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যতম ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ৮১ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

জানা গেছে, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তার বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা–বাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। ১৯৭১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে ভারতের আগরতলায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর সেই হাসপাতালের নামেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে নাম ঠিক করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। হাসপাতালের পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিও গড়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৮২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ঔষধ নীতি প্রণয়নেও তার ভূমিকা ছিল।

Check Also

উড়োজাহাজ বানানো জুলহাসের পাশে তারেক রহমান, দিলেন প্রতিশ্রুতি

ঘোষণা ডেস্ক : উড়োজাহাজ বানিয়ে সারাদেশে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মানিকগঞ্জের জুলহাস মোল্লা। ২৮ বছর বয়সী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *