নওগাঁয় পূর্বশত্রুতার জেরে এক যুবককে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন তার মা।বুধবার(২৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শেফালী বেগম।
শেফালী বেগম নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ী দেওয়ানপাড়া মহল্লার আজগর আলী দেওয়ানের স্ত্রী।
বাড়িতে অস্ত্র রাখার অভিযোগে গত ১৯ মার্চ রাতে শেফালী বেগমের ছেলে সোহেল রানা শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই রাতে তার বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শেফালী বেগম বলেন, তার ছেলে সোহেল রানা শামীম একজন বস্ত্র ও প্লট ব্যবসায়ী। একই মহল্লার আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল মালেকের সঙ্গে পাওনা টাকা ও জমি নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে তাদের বিরোধ চলে আসছিল।
আব্দুল মালেক জমিটি নিয়ে আপোষ-মীমাংসার জন্য ছেলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও ছেলে রিসিভ করেননি বলে শেফালীর ভাষ্য।
তিনি বলেন, “পরে আমার মোবাইলে ফোন করলে আপোষ-মীমাংসার জন্য গত ১৯ মার্চ রোববার তাকে আমার বাসায় আসতে বলি। সেদিন রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে সে আমার বাসায় আসে। তখন ছেলে বাসায় ছিল না।”
শেফালী বলেন, এক পর্যায়ে মালেক পানি খেতে চাইলে ছেলের বউ দোকানে নাস্তা আনতে যান। আর শেফালী পানি আনতে যান। এ সময় এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য নিতে গেলে তাকে ৫০ টাকা দিয়ে বিদায় করেন।
“এ সুযোগে আব্দুল মালেক তড়িঘড়ি করে ঘরে চলে যায়। সে আমার ও অন্য একটি ঘর ঘুরে দেখে; কিন্তু ছেলের ঘরে যায়নি। আমার ঘরে বসে বিভিন্ন কথা বলার এক পর্যায়ে তর্কবিতর্ক হলে উল্টোপাল্টা কথা বলে সে হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায়।”
মালেক প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টার মতো শেফালীদের বাসায় ছিলেন এবং মালেক বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ছেলে সোহেল রানা বাসায় আসেন বলে শেফালীর ভাষ্য।
তার অভিযোগ, “ছেলে বাসায় আসার কিছু পরই র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কোম্পানির অধিনায়ক মেজর মোস্তফা জামান এবং স্কোয়াড কমান্ডার জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানার নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা বাসায় এসে ঘরে তল্লাশি শুরু করেন। এরপর আমার ঘরের আলমারির একটি ড্রয়ার থেকে অস্ত্র উদ্ধারসহ ছেলেকে আটক করা হয়।”
ঘটনাটি ‘আব্দুল মালেকের সাজানো নাটক’ দাবি করে শেফালী বলেন, “আপোষ-মীমাংসার নামে আমাদের বাসায় এসে পানি খাওয়ার নামে সবাইকে ব্যস্ত রেখে অস্ত্র রাখা ছিল তার সাজানো নাটক। মূলত জমি খেকোরা জমিটি গ্রাস করার জন্য কৌশলে অস্ত্র রেখে আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।”
তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার ছেলের মুক্তিসহ দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সোহেল রানা শামীমের স্ত্রী সামিয়া এবং তার দুই বোন শ্যামলী ও শ্রাবণী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আব্দুল মালেক বলেন, “প্রায় এক বছর আগে সোহেল রানা শামীম আমাকে অন্যায়ভাবে মারপিট করেছিল। তারপর থেকে পঙ্গুত্ব জীবনযাপন করছি। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। মামলাটি তুলে নিয়ে আপোষ করতে বারংবার শামীম আমাকে ফোন দিত।”
মালেক বলেন, পরবর্তীতে ফোনে তার মায়ের (শেফালী বেগম) সঙ্গে কথা হলে বাসায় যেতে বলেন।
“ওইদিন তাদের বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে ১০ মিনিটের মতো কথা বলে চলে আসি। আমার বিরুদ্ধে তাদের বাসায় প্রবেশ করে অস্ত্র রাখার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।”
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান বলেন, দেশে তৈরি দুইটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সোহেল রানা শামীম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। আটকের পর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। ২০ মার্চ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি জানতে চেয়ে র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প স্কোয়াড কমান্ডার মাসুদ রানার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি এই র্যাব কর্মকর্তা।