ঘোষণা ডেস্ক :পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আদালত আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আগামী ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন। এ মামলায় আরাভের সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
এ দিকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশভুক্ত আরাভ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে আছেন, না পালিয়ে অন্য দেশে চলে গেছেন সে ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য নেই।
এ নিয়ে পুলিশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। এরই মধ্যে আরাভের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মদের আদালতে আরাভের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় সাক্ষ্য দেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে।
আদালত আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। বাকিদের সাক্ষ্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আরাভ খানের আত্মপক্ষ শুনানির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গতকাল সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ কে এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘এটা একটা প্রসেস। শেষ সময়ে এসেও আসামি আত্মসমর্পণ করতে পারেন। আমরা আশা করছি, আরাভ খানও আত্মসমর্পণ করবেন। ’ তিনি আরো বলেন, ‘এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আশা করছি, আরাভ খানের সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ’
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আরাভ তাঁর শ্বশুর সেকেন্দার আলীকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে মগবাজারের বাসায় যান। ওই বাসার সামনে থেকে একটি গুলিভর্তি রিভলবারসহ তিনি গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় ওই দিন আরাভের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন ডিবি পশ্চিমের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের তত্কালীন উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ১ মার্চ আরাভ খানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক শেখ হাসান মুহাম্মদ মোস্তফা সারোয়ার। একই বছরের ১০ মে আরাভের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এই মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পান তিনি। পরে আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর আরাভের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বিব্রত পুলিশ যা বলছে : আরাভকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, আরাভ দুবাইয়ে আছেন, না পালিয়ে অন্য দেশে চলে গেছেন এ নিয়ে তাঁদের কাছেও সঠিক তথ্য নেই। এ নিয়ে তাঁরা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরাভ বর্তমানে কোথায় আছেন তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। তবে আরাভকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। আবার দুবাই পুলিশ তাঁকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দিন আগে বলা হলেও এখন এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলা হচ্ছে না। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কবে নাগাদ দেশে ফেরানো যাবে সে বিষয়ে তাঁরাও বলা চলে অন্ধকারের মধ্যে আছেন।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এসব কথা বললেও সর্বশেষ গত সোমবার (২৭ মার্চ) আরাভকে ফের ফেসবুকে সরব দেখা গেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভারতের পাসপোর্টধারী হওয়ায় আরাভকে ফেরাতে কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। এ জন্য তাঁরা ইন্টারপোলের পাশাপাশি কূটনৈতিক চ্যানেলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় বহিঃসমর্পণ চুক্তি না থাকলেও দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমঝোতার ভিত্তিতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।