ঘোষণা ডেস্ক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘পরিকল্পনায়’ পিলখানায় ১৪ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার(২৬ ফেব্রুয়ারী) বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “২৫ ফেব্রুয়ারি এলেই আওয়ামী লীগ সরকারের হৃৎকম্প শুরু হয়ে যায়। তাদের (সরকার) একজন মন্ত্রী গতকালকে বললেন যে, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান সাহেব জড়িত। এতটুকু দ্বিধা করলেন না এই ধরনের একটা উক্তি করতে।
“আমরা খুব স্পষ্ট করে আজকে বলতে চাই যে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ ও তার সরকার জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং তাদের চক্রান্তের মধ্য দিয়ে, পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এই বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটনা হয়েছে বাংলাদেশকে একটা দুর্বল নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করবার জন্যে। একই সঙ্গে এদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়ার জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল।
“আমরা খুব সহজে বুঝি, সাধারণভাবে বুঝি যে কী কারণে আপনার যখন বিদ্রোহ হচ্ছে সেই সময়ে আপনারা (সরকার) বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের সঙ্গে আপনারা তখন নেগোসিয়েশন করছেন। কীসের নেগোসিয়েশন? যারা আমাদের সেনাবাহিনীর চৌকশ কর্মকর্তাদের হত্যা করছে, সেই সময়ে আপনারা তাদের সঙ্গে আপস-রফা করছেন?
“সেসব কথা আমাদের সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন যে, সেনাবাহিনীর যে আইন সেই আইনের মধ্যে স্পষ্ট লেখা আছে, বিদ্রোহ হলে তা দমন করতে সেখানে অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। তখন সেই সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন কে? মইন ইউ আহমেদ, যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধবংস করার প্রধান ব্যক্তি ১/১১ এর মাধ্যমে, যিনি চক্রান্তের মধ্য দিয়ে এদেশের স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন।”
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার সদর দপ্তরে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় হত্যা মামলায় ২০১৩ সালে বিশেষ আদালতে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে এবং খালাস পায় ২৭৮জন।
পিলখানার এই নির্মম ঘটনার পর বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে সংস্থাটি পুনর্গঠন করে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-(বিজিবি)’ নামকরণ করা হয়।
১৪ বছর আগের সেই ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই বিএনপি নেতা বলেন, “পত্রিকাগুলোর অবস্থা…। এখানে অনেকগুলো চ্যানেল একটা চ্যানেলও সত্য কথা বলতে পারে না। কেন? কারণ তাদের উপরে খড়গ বসানো আছে, সেই অবস্থা তৈরি করা হয়েছে।
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দুঃখের সঙ্গে, কিছুটা লজ্জার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল। এই দিনটিতে কোনো পত্রিকায় ওইদিনের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এক কলাম একটা সংবাদও ছিল না। সেই দিন নিয়ে পত্রিকাগুলো উল্লেখ করতে পর্যন্ত সাহস পায় না।”
“জাতিগতভাবে আমরা কোন জায়গা এসে পৌঁছেছি যে, এমন একটা ভয়াবহ নৃশংস হত্যাকাণ্ড তা আমাদের জাতীয় জীবনে পুরোপুরি নাড়া দিয়েছে, তা আমাদের জাতির অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সেই দিনটিকে আমরা স্মরণ করতে পর্য্ন্ত পারলাম না,” বলেন তিনি।
আলোচনা সভায় বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “আমাদের একটা জিনিস সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা এখন লড়ছি কার সঙ্গে? আমরা লড়ছি এমন একটা শক্তির সঙ্গে, যে শক্তি আজকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর হামলা করছে, যে শক্তি আজকে আমার অস্তিত্বকে নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমার যে ঐতিহ্য, আমার যে কৃষ্টি, আমার যে চিন্তা, আমার যে ধর্মবোধ, আমার রাষ্ট্রবোধ সমস্ত বিষয়গুলোকে এরা ধবংস করে দিতে চায়। তাদের একমাত্র যে চিন্তায় সেই চিন্তায় তারা দেশকে নিয়ে আসতে চায়।
“আমাদের সবার আগে মনে রাখতে হবে- প্রথমে আমাদের এদেশকে রক্ষা করতে হবে, এদেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে আমাদেরকে, এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আমাদেরকেই রাস্তায় নেমে আসতে হবে।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “সুখের কথা, এখন মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে রাস্তায় নেমেছি। অগাস্ট মাস থেকে আমরা চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি করছি। ১৭ জন নেতা-কর্মীকে প্রকাশ্যে রাজপথে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে, অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, অসংখ্য মানুষ… রুহুল কবির রিজভী, মীর সরাফত আলী সপু থেকে শুরু করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”
তিনি বলেন, “আজকে যারা মনে করছেন যে, এই সরকারের তোষামোদি করলে টিকে যাবেন, টিকবেন না। ইতিহাস বলে যে, কোনো দিন তারা টেকে না। মানুষ জেগে উঠেছে, মানুষ জেগে উঠছে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসছে, তার অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। এর আগে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে চাই। সেই কারণে আমরা সমস্ত গণতান্ত্রিক পন্থায় এগোচ্ছি। আজকে সেখানে বাধা দিয়ে তারা মনে করছেন, তারা খুব ভালো কিছু করবেন, করতে পারবেন না। শিগগিরই সময় আসবে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে উঠবে, আরো দ্বিগুণ গতি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আসুন এই শোক দিবসের শোক নই, আমরা শপথ গ্রহণ করি, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর গণঅভ্যুত্থানে মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করি।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, নির্বাহী কমিটির সদস্য অবরপ্রাপ্ত মেজর মতিউর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ অনেকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।