ঘোষণা ডেস্ক : মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলে এ নিয়ে চতুর্থ শিরোপা জিতল কুমিল্লা। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথম, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় ও ২০২২ সালে তৃতীয় শিরোপা জিতেছিল ফ্রাঞ্চাইজিটি। ফাইনালের মহারণে আগে ব্যাট করে শান্ত-মুশফিকের জোড়া অর্ধশতকে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান তোলে সিলেট। জবাবে চার্লসের দানবীয় ব্যাটিংয়ে ৪ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
সিলেটের ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আরো একটি রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা। এর আগে বিপিএলের ফাইনালে এত রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। এছাড়া তৃতীয়বারের মতো অধিনায়ক হিসেবে ফাইনাল জিতলেন ইমরুল কায়েস। চারটি ফাইনাল জেতার পর হারতে হল মাশরাফি বিন মর্তুজাকে।
রান তাড়া করতে নেমে ঝড়ো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন সুনীল নারিন। কিন্তু ৫ বল খেলে ১ চার ১ ছয়ে ১০ রানেই ফেরেন সাজঘরে। পরের ওভারে জর্জ লিন্ডের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক ইমরুল। ৩ বলে ২ রান করেন কুমিল্লার অধিনায়ক।
৩২ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চার্লসকে নিয়ে এগোতে থাকেন লিটন। ৩৬ বলে ফিফটি করে আরো ছুটছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত রুবেলের বলে শান্তর ক্যাচ হয়ে ৫৫ রানে ফিরতে হয়েছে কুমিল্লার ওপেনারকে। তার বিদায়ে ভেঙে যায় চার্লসের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি।
সিলেটের দেওয়া লক্ষ্য এক সময় কঠিনই মনে হচ্ছিল কুমিল্লার সামনে। লিটনের বিদায়ে কুমিল্লার রানের চাকার গতি কমে যায়। ২৪ বলে কুমিল্লার দরকার ছিল ৫২ রান। এমন সময়ই এক ওভারে ২৩ রান দেন রুবেল হোসেন, হজম করেন ৩ ছক্কা ও ১ চার। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি সিলেট। চার্লস ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ বলে ৭৯ রান ও মঈন আলী ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ২৫ রান করে ম্যাচ শেষ করে আসেন। তাতেই ৪ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
কুমিল্লার আগে টানা দুই শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আছে একমাত্র ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের। ২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দুইবার শিরোপা জিতেছিল তারা। এবার টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কুমিল্লা জিতেছে তাদের চতুর্থ বিপিএল শিরোপা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে সিলেট। কুমিল্লার হয়ে প্রথম ওভারে বল করতে আসেন আন্দ্রে রাসেল। ওই ওভারে আসে ১৮ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট হারায় সিলেট। তানভীরের ঘূর্ণিতে বোল্ড হন চলতি আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তৌহিদ হৃদয়। তার আউটের পর ব্যাটিংয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি। চলতি বিপিএলে এর আগেও ওপরে নেমেছিলেন। তবে আজ ওপরে নেমেও টিকতে পারেননি। ৪ বলে ১ রান করেই ফিরতে হলো সিলেট অধিনায়ককে। রাসেলকে তুলে মারতে গিয়ে কাভারে কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুলের হাতে ক্যাচ তুলেছেন। সিলেট দ্বিতীয় উইকেট হারায় ২৬ রানে।
দুই উইকেট হারানোর পর শান্ত-মুশফিকের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় সিলেট। শান্ত ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে সাজঘরে ফেরেন ৬৪ রান করে। এতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ৫১৬ রান নিয়ে আসর শেষ করলেনবাঁহাতি এই ওপেনার।
শান্ত বিদায়ের পর মুশফিককে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন রায়ান বার্ল। তবে একবার জীবন পেয়েও সেটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১১ রানে জীবন পেয়ে ১৩ রান করেই সাজঘরে ফিরেছেন এই জিম্বাবুয়েন। বার্লের বিদায়ের পর সিলেটের ভরসা হয়ে ক্রিজে এসেছিলেন থিসারা পেরেরা। কিন্তু নারিনের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন শূন্য রানেই। সুবিধা করতে পারেননি জর্জ লিন্ডেও। ৬ বলে ৯ রান করে মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ দেন তিনি। ১ রান করে রান আউটের শিকার হন জাকির হাসান।
অন্য প্রান্তে মুশফিককে রেখে একে একে ফিরেছেন সিলেটের ব্যাটাররা। এর মধ্যে ফাইনালের মঞ্চে মুশফিক অর্ধশতক পূর্ণ করেন ৩৫ বলে। শেষ পর্যন্ত ৪৮ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। কুমিল্লার হয়ে মুস্তাফিজ দুটি, রাসেল, নারাইন, তানভীর ও মঈন নেন একটি করে উইকেট।
সিলেট স্ট্রাইকার্স: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসান, মুশফিকুর রহিম, তৌহিদ হৃদয়, তানজিম হাসান সাকিব, থিসারা পেরেরা, রায়ান বার্ল, জর্জ লিন্ডে, লুক উড এবং রুবেল হোসেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন, জাকের আলী অনিক, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, মঈন আলী, সুনীল নারিন, আন্দ্রে রাসেল এবং জনসন চার্লস।