ঘোষণা ডেস্ক :দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে প্রস্তুত করতে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
৭ বছর পর অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায় যোগ দিয়ে তিনি বলেছেন, “মাফিয়া প্রধানের (শেখ হাসিনা) পালানোর পর দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় হয়ত ঘনিয়ে আসছে। তাই কোনো ব্যক্তি নয় বরং দলকে এ ব্যাপারে ধীরে ধীরে আপনারা প্রস্তুত করুন।
“সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী- সমর্থক- শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমার আহ্বান- আপনারা শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকুন, আপনারা যেকোনো মূল্যে ঐক্যকে ধরে রাখুন।”
দেশবাসীর প্রতি বার্তায় তিনি বলেন, “বিএনপি শুধু আপনাদের ভোটের পুনরুদ্ধারই নয়, আপনাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। আপনাদের সমর্থন পেলে বিএনপি এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে সরকার আপনার কাছে, আপনাদের কাছে তথা দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে জনগণের সমর্থন চাই, চাই সকলের সহযোগিতা।”
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি ভবন প্রাঙ্গণে বিএনপির বর্ধিত সভা শুরু হয়। লন্ডন থেকে ওই অনুষ্ঠানে ভিডিওকলে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ার পারসনর খালেদা জিয়াও লন্ডন থেকে ভিডিওকলে বর্ধিত সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে অল্প সময় বক্তব্য দেন। সবশেষ ২০১৮ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয়, সেখানে সভাপতিত্ব করেছিলেন খালেদা জিয়া।
গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সেরে চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেড় দশকের বেশি সময় সরকার ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবারের সভায় যোগ দিয়ে ভোটের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নাই। রাষ্ট্র ও সমাজে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার পূর্ব শর্ত হল প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার বাস্তবায়ন। এজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানায়।”
‘নির্বাচন বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে’
রাষ্ট্র সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচনের মত বিষয়গুলো নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। একে নস্যাৎ করার জন্য ইতোমধ্যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সুকৌশলে রক্ত পিছলে রাজপথে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টা চলছে।
“জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমি আজ দেশের কৃষক-শ্রমিক-জনতা, আলেম-উলামা- পীর-মাশায়েক তথা সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে…আপনারা যারা এখানে (বর্ধিত সভায় নেতাকর্মী) উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের প্রত্যেকের মাধ্যমে তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান ও অনুরোধ জানাচ্ছি।”
তারেক বলেন, “যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনও থামেনি। সংস্কার কিংবা স্থানীয় নির্বাচন এসব ইস্যু নিয়ে জনগণের মাঝে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
‘উপদেষ্টাদের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর’
বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবসহ অনেক উপদেষ্টা ভোট আয়োজনের সময় নিয়ে কথা বলেছেন। সরকারের তরফ থেকে চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে।
তবে কোনো কোনো উপদেষ্টার বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে মনে করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
“বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য মন্তব্য স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণও হয়ে উঠেছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনও তাদের কর্ম পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না বলে মনে হচ্ছে,” যোগ করেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে তারেক বলেন, “বর্তমান সরকার এখনও মনে হয় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সরকার যেখানে বাজার পরিস্থিতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারছে না, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে কেন দেশের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করতে চাইছে, এটি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।
“গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেটি হবে সারা দেশে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া, যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থান আকাঙ্ক্ষাবিরোধী, গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না, বিএনপি পা দিতে পারে না।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান, সারা দেশে গণহত্যাকারীদের দোসর মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন। অবিলম্বে আগামী দিনগুলোর জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।”
‘নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানাই’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে যাচ্ছে শুক্রবার।
নতুন দল গঠনের বিষয়ে তারেক বলেন, “গণহত্যাকারী মাফিয়া প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর এ পর্যন্ত অনেকগুলো নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি সকল নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়।
“তবে নির্বাচনের মাধ্যমে গ্রহণ কিংবা বর্জনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে জনগণ। সুতরাং প্রতিটি দলের অংশগ্রহণ একটি অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমি বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাই।”
বর্ধিত সভায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। লন্ডন থেকে ভিডিও কলে যুক্ত হন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন।