নিজস্ব প্রতিবেদক :বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, রাজনীতিবিদদের সংস্কারের বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করেন। রাজনীতিবিদরা এ দেশকে স্বাধীন করেছেন। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরের বিপ্লব উদ্যানে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বিজয় শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বৈরাচারের পতনের পরে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিল বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে।
আরো গল্প শুনবেন সংস্কারের। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সব সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণে আজকে যে অর্থনীতি বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছে, সেটা হচ্ছে বিএনপির অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে। আজও বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সংস্কারের গল্প আরো শুনতে চান।
সারা দিন ধরে বলব। রাজনীতিবিদদের সংস্কারের বক্তব্য দেওয়া বন্ধ করেন। স্টপ লেকচার ইন পলিটিশিয়ান। পলিটিশিয়ানরা এই দেশকে স্বাধীন করেছেন।শেখ হাসিনার ১৫ বছর বাদ দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতে বিএনপি যে সংস্কার করেছে তাতে ডাবল ডিজিট গ্রোথের মধ্যে দাঁড়াত।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সুতরাং আগামী দিনের সংস্কারের কথা যদি বলি আমাদের যে ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি প্রতিজ্ঞা করেছি, বিএনপিসহ প্রায় ৫০টি দলের ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের ৩১ দফার সংস্কার পরিপূর্ণভাবে পালন করব। এখন কি সংস্কার হবে, না হবে আমরা সেটার সহযোগিতা করতে রাজি আছি। কিন্তু এটা যাদের কাজ, সেটা হচ্ছে আগামী সংসদের কাজ। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের কাজ।
বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে, যেভাবে বিগত দিনে নিয়েছে। আর যেখানে বিগত দিনে রাজনীতিবিদরা সফল হয়নি, তার জন্য রাজনীতিবিদরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। এবং রাজনীতিবিদরা তার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আগামী দিনের রাজনৈতিক পথ সঠিক পথে চালাবে। সেটাই গণতন্ত্র, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই যে সংস্কারের কথা বলছে, প্রথম সংস্কার করেছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। প্রথম সংস্কারটা হলো, একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র। এটি ছিল, প্রথম সংস্কার বাংলাদেশের। সংস্কার সংস্কার যারা বলে তারা এগুলো বুঝে নাই, চিন্তা করে নাই। দ্বিতীয় সংস্কার হলো সরকার চালিত অর্থনীতি। যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বাকশালরা লুটপাট করে দেশের দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। সেখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৃতীয় সংস্কার করেছিলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে। সেই মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশিদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের সমান অধিকার পেয়েছিল। এ জন্য শ্রমিক, কিশোর, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী সবাই মিলে আরেকটি নতুন বাংলাদেশ গড়েছিল সেদিন। সেই সংস্কারের মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, আজকের যে গার্মেন্টসশিল্প অর্থনীতিতে প্রথম অবদান রাখছে। সেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে গার্মেন্টসশিল্প নীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রথম পিলার প্রথম শক্তি। বিদেশে মানুষ পাঠিয়ে যে রেমিট্যান্স আজ বাংলাদেশে আসছে, দেশের মানুষ বাইরে গিয়ে কাজ করছে, সেটার অবদান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের।’
মহান বিজয়ের জন্য চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিপ্লব উদ্যান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। প্রধান এবং প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। এই চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন থেকে প্রথম জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। আজকের স্বাধীনতা পাওয়ার পেছনে যুদ্ধের যে প্রেরণা, স্বাধীনতাযুদ্ধের যে প্রেরণা, সেটা চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে এবং এ অঞ্চল থেকে শুরু হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় গর্বের।’
স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা এখনো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমরা এখনো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। অথচ স্বাধীনতার পর যখন বাকশাল হয়, এই বাকশালের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে মুখ বন্ধ ঘোষণা করে দেয়, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং মুক্তিযুদ্ধাসহ দেশের লক্ষ মানুষের ওপর গুম, খুন, নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়। সেখান থেকে আবারও মুক্ত করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।’
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সমাবেশ শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এক বিশাল বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, কাজির দেউড়ি মোড় হয়ে নাছিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় মঞ্চে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুলসংখ্যক সাধারণ জনগণ অংশ নেয়।