ঘোষণা ডেস্ক :ঘুষের টাকা গুনে গুনে পকেটে নেওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমানকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে তাকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব। এর আগে হাজীগঞ্জে একটি দোকানে বসে সাদা পোশাকে এসআই মাহফুজুর রহমানের ঘুষের টাকা গুনে গুনে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতেদেখা গেছে, এসআই মাহফুজুর রহমান স্থানীয় একটি দোকানের চেয়ারে খোশ মেজাজে বসে আছেন। তিনি বলছেন, ১০ হাজার টাকা কইছি। সামনে বসে থাকা এক ব্যক্তি বলছেন, ‘সবুরে মেওয়া ফলে।’ পুলিশ কর্মকর্তা তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘এক টাকাও কম হইতো ন।’
সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘বস, একটু বসেন।’ এসআই তখন মুচকি হাসেন। মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘কাম শেষ, এখন টিয়া।’ এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘মাহফুজ ভাই, আসলে যে মুরুব্বি, সে বেকার মানুষ তো জানেন।’ এ সময় এসআই মাহফুজ হেসে হেসে বলেন, ‘বেকার না আকার।’ তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘যাই হোক তার ছেলেমেয়ে বাদ, তিনি বেকার মানুষ। তিনি আগে ড্রেজার ব্যবসা টেবসা করতো। অনেকের কাছে টাকা পাওনা ছিল। এর আগে যাই দিছি দেখছেননি। তারে একজন দিয়ে গেছে, তার আবার ওষুধ কিনা লাগে, এরপর এই ঝামেলা লাগি গেছে।’ এ সময় মাহফুজ বলেন, ‘দেন দেন।’ তখন প্রথম ব্যক্তি বলছেন, ‘গরিব মাইনসের লাগি একটু দিলটা নরম করেন। যেডিন ঝামেলা আছে।’
এরপর মাহফুজ আরেক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে দ্বিতীয় ব্যক্তির দিকে হাত এগিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মাহফুজের হাতে দেন। ওই ব্যক্তি টাকা দিতে দিতে বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন। আমি আরেকদিন এসে ডিটেইলস বলবো, তখন বুঝবেন। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না। যদি অফিসিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম।’ এ সময় প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘টাকা গইন্নেন না, গইন্নেন না।’
তখন মাহফুজ বলেন, ‘টাকা গুনে নেওয়া সুন্নত।’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘রুম অন্ধকার, আল্লাহ কইছে মাইনসেরে দেহাই কিল্লাই।’ এ সময় মাহফুজ মুচকি হাসতে হাসতে টাকা গুনছেন কয়েকবার। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘চা খাবেন। মাহফুজ জবাব দেন, ‘পরে খাবো’। এই বলে টাকা হাতের মুঠে নিয়ে বের হয়ে যান।
তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এসআই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ ঘুষের টাকা গুনে নেওয়ার ভিডিও আপনার কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, চুপ করে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ফরিদগঞ্জ থানায় কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন জনকে রাজনৈতিক মামলায় ফেলে মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করেন মাহফুজুর রহমান। কিন্তু ওই থানা থেকে হাজীগঞ্জে এসেও পুরোনো স্বভাব পরিবর্তন করেননি তিনি।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাকে হাজীগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করে চাঁদপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।’
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফরিদগঞ্জ থানা থেকে হাজীগঞ্জ থানায় বদলি করা হয় উপপরিদর্শক মাহফুজুর রহমানকে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তবে গত দেড় মাস আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) বদলি হলেও অদৃশ্য কারণে হাজীগঞ্জ থানা ছাড়েননি তিনি।