যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন শেষে নির্ধারিত সময়ে নগরীর মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যান নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আলতাফ (ছদ্মনাম)। নিজের পাসপোর্ট রিনিউ করতে অফিসটির ৩০১ নম্বর কক্ষে সকল কাগজপত্র জমা দেন তিনি। কিন্তু দায়িত্বরত কর্মী আলতাফের আবেদন গ্রহণ করেননি। বরং কক্ষের বাহিরে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যাকে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিলে সবকিছুই সহজে করতে পারবেন এ ব্যবসায়ী। যোগাযোগ করতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো দুর্ব্যবহারের শিকার হন আলতাফ।
ঘটনাটি কিছুদিন পূর্বের হলেও বৃহস্পতিবার(৭ মার্চ) অফিসটিতে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে এর সত্যতা উন্মোচন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদস্যরা। এসময় অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার প্রমাণ পাওয়ায় হাতেনাতে ধরা পড়ে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্য ও এক দালালসহ চারজন। একই অভিযানে গ্রাহকের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের দুই কর্মীর দুর্ব্যবহারের প্রমাণ পায় দুদকের অভিযানিক দল। দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর তিন সদস্যের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করেন। কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেনের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ, উপসহকারী পরিচালক সবুজ হোসেন।
দুদক জানায়, দুদকের অভিযোগ নম্বর ১০৬-এ এক গ্রাহক মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহকদের সাথে দুর্ব্যবহার, হয়রানি, ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতি বিষয়ে অভিযোগ জানান। পরবর্তীতে দুদকের টিম পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় দুদক টিম মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে প্রথমে ছদ্মবেশে কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করে। এরপর কথা বলা হয় পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনের সঙ্গে। এ সময় কাউন্টার, ছবি এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহের কক্ষ পরিদর্শন করা হয়। এ সময় আনসার ও পুলিশ সদস্যদের নানা অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় দুদক।
অভিযানে দুদক পুলিশ কনস্টেবল সওকতুল ইসলাম, ইমন বড়ুয়া, আনসার সদস্য আমানউল্লাহ, দালাল মো. মহসিনকে হাতেনাতে আটক করে। এছাড়া অভিযুক্ত পাসপোর্ট অফিসের উচ্চমান সহকারী জসিম উদ্দিন, সুপারিটেনডেন্ট শওকত আলী মোল্লা’র বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন জানান, অভিযানের সময় আনসার সদস্য আমাউল্লাহ এবং পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ ও ইমন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। একই সময়ে পাসপোর্ট অফিসের সামনে থেকে মহসিনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। এরপর অভিযোগকারী ব্যক্তিকে নিয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দুজন কর্মচারীকে ডাকা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় পরিচালককে।
৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
দুদকের অভিযানের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এরমধ্যে আটক দালাল মো. মহসিনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাত দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন। পুলিশ কনস্টেবল সওকতুল ইসলাম ও ইমন বড়ুয়াকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। আনসার সদস্য মো. আমান উল্লাহকে পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া সকল কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী শওকত আলী মোল্লা ও জসিম উদ্দিনকে।