
ঘোষণা ডেস্ক : এক দশক পর ঢাকায় প্রকাশ্য সমাবেশ করল জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশ থেকে সরকার এবং সব দলকে নিয়ে জানানো হল আলোচনা ও ‘ঐক্যের’ আহ্বান। এই ‘ঐক্যের’ মধ্য দিয়ে একটি ‘সঠিক বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেছে দলটি।
শনিবার(১০ জুন) বেলা আড়াইটায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত।
জামায়াতে ইসলামীর এই সভায় দলের ৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন বলেন, “তিনটি দাবিতে মিলিত হয়েছি সমাবেশে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে, জামায়াতের নেতাদের মুক্তি দিতে হবে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।”
২০১৩ সালের পর এই প্রথম রাজধানীতে নির্বিঘ্নে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে জামায়াত।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাবেশ শেষ করা, বিশৃঙ্খলা না করা এবং মিলনায়তনের বাইরে না যাওয়ার শর্তে তাদেরকে জমায়েতের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জামায়াত। এরপর বহুবার সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েও নির্বিঘ্নে তা শেষ করতে পারেনি দলটি।
নানা সময় ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। সেসব কর্মসূচি থেকে অনেক নেতা-কর্মীকে আটকও করা হয়।
দুপুর আড়াইটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ শুরুর আগেই জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়। মিলনায়তনের বাইরের প্রাঙ্গণেও তাদের ভিড় ছড়িয়ে পড়ে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, “কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে ভবিষ্যতে যুগপৎ আন্দোলন, যৌথ আন্দোলন শুরু হতে পারে। আন্দোলন ছাড়া এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
সমাবেশে অতিথি ছিলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আবু মূসা, সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন মানিক, দক্ষিণের দেলাওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন প্রমুখ।
সমাবেশ চলার সময় দলের আমির শফিকুর রহমানসহ নেতাদের মুক্তিতে স্লোগান দেয় নেতা-কর্মীরা।
এই সমাবেশকে ঘিরে দুপুর থেকে মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে শাহবাগের দিকে সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রায়ট কার, প্রিজন ভ্যানসহ সাদা পোশাকে সদস্যরাও ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী সাংবাদিকদের বলেন, “জামায়াত ইসলাম তাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করেছে। যথা সময়ে তারা সমাবেশ করে চলে গেছে।”
আলোচনার আহ্বান
সমাবেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ধরে
আলোচনায় বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য তাহের।
তিনি বলেন, “আপনারা যারা সরকারে আছেন, আপনারাও বলছেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। আমরাও চাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রের কথা হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু ডালমে কুচ কালা হ্যায়।
“২০১৪ সালের নির্বাচন, ২০১৮ সালের নির্বাচন গেছে। এবার সেভাবে হতে দেওয়া হবে না। এবার নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আলোচনায় আসুন। সমাধান পাবেন।”
“সরকার এবং সকল দলকে নিয়ে ঐক্যের আহ্বান জানাই একটি সঠিক বাংলাদেশ গড়ে তুলার জন্য,” বলেন তাহের।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারান দলটির এই নেতা বলেন, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিষ্ঠায় রাজপথে জামায়াত ‘যা যা করা দরকার, তা করবে।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত এখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। গত সংসদ নির্বাচনে দলটির নেতারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেছিল।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানসহ নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তাহের বলেন, “আমাদের ‘নির্দোষ’ নেতাদের আলেম ওলামাদের জেলে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা সকলের মুক্তির দাবি করতে চাই না, অবিলম্বে আমাদের নেতাদের মুক্তি দেন। তা না হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “আমাদের সবার প্রিয় দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশে ‘ন্যায়ের প্রতীক’ দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিতে হবে।”