
নগরীর আকবরশাহে পাহাড় ধসের ঘটনায় কাউন্সিলর জসিমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বুধবার (১১ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেন আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবর। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) পরিবেশের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে ৭জনের নাম উল্লেখ করে আকবরশাহ থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
কাউন্সিলর জসিম ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- চসিকের রাস্তা নির্মাণ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, একই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, চসিকের সিনিয়র সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) ওয়ালী আহমেদ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এবি-হক ব্রাদার্সের ওমর ফারুক, তার স্ত্রী মোসা. তাকিয়া বেগম, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের সহযোগী মোহাম্মদ ইসমাইল।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ওই এলাকায় প্রকল্প পরিচালনাকালে কোন টিলা বা পাহাড় কাটা হবে কিনা, কি পরিমাণ কাটা হবে, পাহাড় কাটা হলে ভূমিধস রোধকল্পে কোন গাইড ওয়াল কিংবা রিটেনশন ওয়াল নির্মাণ করা হবে কিনা এ সম্পর্কে কোন ধরনের তথ্য আমাদেরকে জানানো হয়নি এবং অনুমোদনও নেয়া হয় নি। অননুমোদিতভাবে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ধারা ৬ (খ) লংঘন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যে কারণে সেখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধনসহ জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির আরও বেশি আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে কারণে সাতজনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা করা হয়েছে।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত করবে পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাস্তা নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ১৩ হাজার ৩০০ ঘনফুট পাহাড় কাটার দায়ে চসিক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে শুনানির নোটিশ দেয়া হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড লিখিত অভিযোগ দিলে আবারও শুনানিতে হাজির থাকার নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ১০ জানুয়ারি ও ৩১ জানুয়ারি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু ১০ জানুয়ারি শুনানিতে কাউন্সিলর জসিম, অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও চসিক ও সিডিএ’র কোনো কর্মকর্তাই এতে উপস্থিত হননি। ৩১ জানুয়ারি শুনানিতে কেবল অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি অংশ নিলেও অন্য পক্ষগুলো অনুপস্থিত ছিলেন।
একই পাহাড় কাটার অভিযোগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মো. শাহজাহান নামে একজন এস্কেভেটর চালককে আটক করে ৭ দিনের কারাদণ্ড দেন কাট্টলীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক। সেসময় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীকার করেছিলেন কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে মো. ইসমাইল নামে তার এক সহযোগী তাকে দিয়ে পাহাড় কর্তন করাচ্ছিলেন এবং ৫০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কর্তন করা হয়েছে।
এদিকে ৭ এপ্রিলের পাহাড় ধসে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরকেও মামলার অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর।